৫ কোটি টাকার ‘বাঁধের ৬০ ভাগ’ ৩ মাসেই নদীতে

পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহীর তাহেরপুর শহররক্ষা বেড়িবাঁধ ‘নিম্নমানের সামগ্রী’ দিয়ে নির্মাণ করার কারণে তিন মাসের মধ্যে বাঁধের ৬০ শতাংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2019, 06:01 PM
Updated : 22 August 2019, 07:33 PM

ওই শহররক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার দুদকের একটি দল অভিযানে গেলে এই প্রমাণ পায় বলে কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন।

বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় একটি প্রকল্পের আওতায় এই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়।

প্রনব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেড়িবাঁধের প্রকল্পের ব্যয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা এবং বাঁধটির দৈর্ঘ্যে ৪১৫ মিটার, যার মধ্যে ৪০০ মিটারের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। প্রকল্প পরিদর্শনে দেখা যায়, অত্যন্ত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় নির্মাণের তিন মাস যেতে না যেতেই বাঁধের প্রায় ৬০ ভাগ নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে।”

বাঁধের অন্যান্য অংশেও ফাটল দেখা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুদক টিম প্রকল্প সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহ করেছে এবং তা যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধানের অনুমোদন চেয়ে কমিশনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে।

এদিকে শেরপুরের সদর উপজেলার চরপক্ষিমারী ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির ৪০ দিনের প্রকল্পে দুর্নীতির সত্যতা পায় দুদকের আরেকটি দল।

প্রনব জানান, উপজেলার নন্দীজোড় গাজী মেম্বারের বাড়ি থেকে খাসপাড়া কামারপাড়া দেলোয়ারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ছয় লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। এতে ৮০ জন উপকারভোগীর কাজ করার কথা থাকলেও মাত্র ১৮ জনকে কাজ দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে রাজধানীর উত্তরা বিআরটিএতে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, ফিটনেস প্রদান, নতুন নম্বর প্লেট গ্রহণ ইত্যাদি সেবা গ্রহণে ঘুষ গ্রহণ এবং গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালায় দুদক।

প্রনব কুমার জানান, অভিযানে দুদক টিম দেখতে পায় সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দালালদের দৌরাত্ম্য রয়েছে। এ সময় দুদক টিমের উপস্থিতি বুঝতে পেরে কয়েকজন দালাল দৌড়ে পালিয়ে যায়।

“কিছু সেবাপ্রার্থী অভিযোগ জানান, তাদের কাজ অনেক দিন ধরে পেন্ডিং রয়েছে। দিনের পর দিন ঘুরে তারা তাদের কাজ সমাধান করতে পারছেন না। উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য তিনজন ছাত্রের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেন্ডিং ছিল অনেক দিন ধরে, যা দুদক টিমের হস্তক্ষেপে তাৎক্ষণিক সমাধান করা হয়।”

এছাড়া বিআরটিএর এই কার্যালয়ে অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় একজন ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেছে দুদক দল।

অপরদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের ক্যান্টিনে খাদ্য দ্রব্যের নির্ধারিত দামের বেশি টাকা রাখা এবং কাঁচামাল বাইরে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, দুদকের একটি দল অভিযানে দেখতে পায়, কারা ফটকের ক্যান্টিনে মূল্য তালিকা ও খাতায় যা লেখা হয় বাস্তবে তার থেকে ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা ঘটনার বিষয়ে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে দুদক দলকে আশ্বস্ত করেছে বলে জানান তিনি।