রোহিঙ্গাদের কাছে প্রশ্ন, তারা ফিরে যেতে চায় কি না

প্রত্যাবাসনের তালিকায় যে সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গার নাম এসেছে, তারা মিয়ানমার ফিরতে চান কি না, তা জানতে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করবে বাংলাদেশ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2019, 06:00 PM
Updated : 19 August 2019, 06:00 PM

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম সোমবার রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, “ইউএনএইচসিআরের নেতৃত্বে যৌথভাবে আমরা এনিয়ে কাজ করব।”

এদিকে সর্বশেষ এই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা নিয়ে বুধবার নিরাপত্তা পরিষদ রুদ্ধদ্বার আলোচনায় বসতে যাচ্ছে।

ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও বেলজিয়ামের অনুরোধে এই বৈঠক হচ্ছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

মিয়ানমারের কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স তিন দিন আগে জানিয়েছিল, আগামী ২২ অগাস্ট ৩ হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে।

তবে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে এখনও সুস্পষ্ট করে কিছু বলেননি।

কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গারা (ফাইল ছবি-রয়টার্স)

মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর ২০১৭ সালের অগাস্ট থেকে পরবর্তী সময়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তার আগে গত কয়েক দশকে এসেছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতিও নিয়েছিল বাংলাদেশ।

কিন্তু মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা না ফেরায় এবং তারা কেউ ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা ঝুলে যায়।

এরপর গত মাসে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের বৈঠকে প্রত্যাবাসন চুক্তির অংশ হিসেবে যাচাই বাছাইয়ের জন্য মিয়ানমারের হাতে ২৫ হাজার রোহিঙ্গার নতুন একটি তালিকা দেয় বাংলাদেশ।

তার মধ্য থেকে ৩ হাজার ৩৪০ জনের বিষয়ে মিয়ানমারের ছাড়পত্র আসে।

মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাও তাই গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২২ অগাস্ট ওই সংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে আনতে তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন।

এরপর প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি, নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে রোববার জরুরি বৈঠক হয় কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে।

ওই বৈঠকের পর চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার নূরুল আলম নেজামী বলেছিলেন, “২২ অগাস্ট প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শেষ করেছি। এখন শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে।”

তবে একইদিন ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক  বলেন, “বিষয়টি (প্রত্যাবাসন) এখনও আলোচনার টেবিলে রয়েছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, যে কোনো সময় শুরু হবে।”

রোহিঙ্গা শরণার্থী (ফাইল ছবি)

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে এলেও বাংলাদেশ এটাও বলেছে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হবে না।

অন্যদিকে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও নাগরিকত্বের স্বীকৃতির নিশ্চয়তা না পেলে রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে অনীহার কথা বলে আসছেন।

রোহিঙ্গারা যেন তাদের নিজভূম রাখাইন প্রদেশে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বাস করতে পারে, তা নিশ্চিতে মিয়ানমারকে তাগিদ দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলে আসছেন, রাখাইনে পরিস্থিতি এখনও রোহিঙ্গাদের ফিরে আসার উপযোগী হয়নি।

আরও খবর