বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর আয়োজনে ‘থাকতে চায়’ ভারত

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ উদযাপনে অংশীদার হতে আবারও আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2019, 02:53 PM
Updated : 8 August 2019, 02:53 PM

দিল্লি সফররত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বৃহস্পতিবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এই আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সেখানে বলা হয়,  ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে’ এই বৈঠক হয়।

“বৈঠকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কর্মসূচির অংশীদার হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।”

এর আগে গত মে মাসে দিল্লিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে এক বৈঠকেও একই ধরনের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদিন সে সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমককে বলেছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে দুই দেশ যৌথ উদ্যোগ নিলে তা আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্ব পাবে বলে মত প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতির ক্ষেত্রেও তা ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।

আসছে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মের শত বছর পূর্ণ হবে। আর ঠিক পরের বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশ উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে তার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার ঠিক আগে আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর শুরু হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এই যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মিত্রবাহিনীর কাছে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।  ওই যুদ্ধে কয়েক হাজার ভারতীয় সেনা শহীদ হয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকারে ফেরার পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১১ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীকে সম্মাননা জানানো হয়। পরবর্তীতে সম্মাননা পান ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপায়ী এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি।

২০১৫ সালের ৭ জুন বাংলাদেশ সফরে এসে বাজপায়ীর পক্ষে সেই সম্মাননা স্মারকটি নেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল।

অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় শেখ হাসিনাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে অভিনন্দন জানান নরেন্দ্র মোদী।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার 'জিরো টলারেন্স' নীতির ভূয়সী প্রশংসা করেন মোদী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীমান্তে মাদক পাচারসহ সব ধরনের চোরাচালান বন্ধে ভারত সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী চোরাচালান বন্ধ করাসহ একটি নিরাপদ ও কার্যকর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে ভারত সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার ইতোমধ্যে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং ভারতও মনে করে- এ সমস্যার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বাংলাদেশকে বিশ্বে রোল মডেল অভিহিত করে বিশেষজ্ঞদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অবলোকন করার জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণের পরামর্শ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।”

অন্যদের মধ্যে ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান ও আইজিপি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।