অসাধুদের জন্য যেন মৎস্য খাতের সম্ভাবনা নষ্ট না হয়: রাষ্ট্রপতি

মাছের খাবার নিয়ে গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবর দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, অসাধুদের জন্য মৎস্য খাতের মতো সম্ভাবনাময় খাত যেন নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2019, 04:59 PM
Updated : 21 July 2019, 04:59 PM

জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৯ উপলক্ষে রোববার বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি একথা বলেন।

মাছের খাবার উপাদান নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, “মৎস্য চাষ একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় খাত। কর্মসংস্থানেও এ খাতের অবদান উল্লেখযোগ্য।

“কিন্তু মৎস্য চাষের উপকরণ বিশেষ করে মাছের খাদ্য উপাদান নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচারিত হয়েছে। এতে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তাই কিছু অসাধু লোকের জন্য যাতে এ খাতের সম্ভাবনা নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ থাকে হবে।”

মৎস্য চাষে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে তিনি বলেন, “মাছের পোনা অবমুক্তকরণসহ প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কাজির গরু কেতাবে থাকলে চলবে না, গোয়ালেও থাকতে হবে।”

শিল্প বর্জ্যের কারণে নদ-নদী ‘মাছশূন্য’ হচ্ছে বলে অনুষ্ঠানে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি। 

তিনি বলেন, “উজান থেকে নেমে আসা পানির সাথে বালির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার দ্রুতই দেশের নদ-নদীর নাব্যতা কমে আসছে। এমনি অনেক জলাশয়ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

“অপরিকল্পিত শিল্প-কারখানা ও বসতবাড়ি-স্থাপনের কারণেও জলাশয় ভরাট হচ্ছে। এছাড়া শিল্প বর্জ্যের কারণেও বিভিন্ন নদনদী মাছশূন্য হচ্ছে। এতে মাছের বিচরণ ক্ষেত্রও সংকুচিত হচ্ছে। কমে আসছে মিঠা পানির মাছের উৎপাদন।”

পাস্তুরিত দুধে রাসায়নিকের উপস্থিতি নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আপনারা জানেন যে, দেশের রপ্তানি বাণিজ্যেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ একটি উল্লেখযোগ্য খাত। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে বিদেশেও রপ্তানি সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।

“পাস্তুরিত দুধ নিয়েও ক্ষতিকারক ও নেতিবাচক খবর প্রকাশ ও প্রচারিত হচ্ছে। এতে ভোক্তাদের মাঝে পণ্য সম্পর্কে বিরূপ ধারণা হচ্ছে। একবার ক্রেতারা কোনো পণ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে শুধু যে ব্যবসার ক্ষতি তা নয়, প্রকারান্তরে প্রান্তিক চাষী বা উৎপাদনকারীগণও চূড়ান্ত ক্ষতির শিকার হন।”

মৎস্য ও পশু সম্পদ খাতে যে কোনো অনিয়ম কঠোরভাবে প্রতিহত করায় গুরুত্ব দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, “বিভিন্ন কোম্পানি দুধ না কিনলে প্রান্তিক চাষীগণ তাদের উৎপাদিত দুধ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বে; নয়ত কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হবে। এতে দুধ ও গবাদিপশুর উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশের অর্থনীতিতেও এর মন্দ প্রভাব পড়বে। মুরগি ও গবাদিপশু পালনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।

“তাই মৎস্য ও পশুসম্পদ খাতের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এ খাতের যে কোনো অনিয়ম কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। অনিয়মের সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”

মাছের উৎপাদন বাড়াতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের নিয়ে পরিকল্পনা করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “বিশাল জলসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির দায়িত্ব শুধুমাত্র সরকার বা মৎস্য বিভাগের নয়।

“তাছাড়া মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ বা মুক্ত জলাশয়ের জৈবিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের জন্য অধিকাংশ জলাশয়ের মালিকানা বা কর্তৃত্ব এককভাবে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় নেই। এজন্য সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি মৎস্য সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান ও জনগোষ্ঠিকে সম্পৃক্ত করে কর্মসূচি গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।”

বঙ্গভবনের দরবার হলে এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, মৎস ও প্রাণি সম্পদ সচিব রইস উল আলম মন্ডল, মৎস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সাইদ মো. রাশেদুল হক।

পরে বঙ্গভবনের সিংহ পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেল, মহাশোল, পাবদা, গুলশা, চিংড়ির ৩ হাজার ৪৭০টি পোনা ছাড়েন করেন রাষ্ট্রপতি।