ওষুধ প্রশাসনে দুই কর্মকর্তার চাকরিতে নিষেধাজ্ঞা

রিড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ পানে ২৮ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় বিচারিক আদালতের রায়ে উঠে আসা ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার চাকরিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2019, 12:44 PM
Updated : 18 July 2019, 12:44 PM

তবে স্বাস্থ্য সচিব ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক যদি মনে করেন তাদের অন্য কোথাও পদায়ন করবেন, তাহলে তা তারা করতে পারবেন।

২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর রিড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ পানে ২৮ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার রায় দিয়েছিলেন ঢাকার ঔষধ আদালতের বিচারক আতোয়ার রহমান।

ওই রায়ে বিচারক বলেছিলেন, মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তখনকার সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম এবং উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেনের ‘অযোগ‌্যতা ও অদক্ষতার কারণে’ রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে ব‌্যর্থ হয়েছে।

পরে ২০১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এ দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের পর চলতি বছরের ৩১ মার্চ ‘তিরস্কার’ করে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে নেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এরপর এ দুই কর্মকর্তা তাদের চাকরি শুরু করেন।

ওই প্রত্যাহার আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এইচআরপিবি’র আবেদনে বৃহস্পতিবার বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়।

গত ৩১ মার্চের মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশ কেন অবৈধ এবং আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। দুই কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন রবিউল আলম বুদু।

রীড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে ২০০৯ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সারা দেশে ২৮টি শিশুর মৃত্যু হয়।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম ওই ঘটনায় ঢাকার ড্রাগ আদালতে একটি মামলা করেন, যাতে রীড ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়।

ওই মামলার রায়ে পাঁচ আসামির সবাই খালাস পেয়ে যান। বাকি চার আসামি হলেন- মিজানুরের স্ত্রী কোম্পানির পরিচালক শিউলি রহমান, পরিচালক আব্দুল গণি, ফার্মাসিস্ট মাহবুবুল ইসলাম ও এনামুল হক।

বিচারক আতোয়ার রহমান ওই রায়ে বলেন, মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তখনকার সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেনের ‘অযোগ‌্যতা ও অদক্ষতার কারণে’ রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে ব‌্যর্থ হয়েছে।

আদালতের ওই রায় আসার পরও ঔষধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাই কোর্টে একটি আবেদন করলে ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ হাই কোর্ট রুল জারি করে।

ওষুধ প্রশাসনের ওই দুই কর্মকর্তাকে কেন চাকরি থেকে অপসারণের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানাতে চাওয়া হয় রুলে। স্বাস্থ্য সচিব ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এর জবাব দিতে বলা হয়।

ওই রুলের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১১ জুলাই হাই কোর্টে একটি প্রতিবেদন দেয়, সেখানেও ওই দুই কর্মকর্তার অবহেলার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চেয়ে আরেকটি সম্পূরক আবেদন করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।

এরপর ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চায় হাই কোর্ট। পরে স্বাস্থ্য সচিব এক প্রতিবেদনে আদালতকে জানায়, ওই দুই কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছে।

কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় নতুন একটি আবেদন করেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের মনজিল মোরসেদ। সেই আবেদেনে ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে তলব করা হয়।

সে অনুযায়ী স্বাস্থ্য সচিব বুধবার আদালতে হাজির হয়ে জানান, ওই দুই কর্মকর্তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে আদালত তাকে বৃহস্পতিবার আবারও হাজির হয়ে ‘যথাযথ ব্যাখ্যা’ দিতে নির্দেশ দেয়।

এরপর স্বাস্থ্য সচিব মো. সিরাজুল হক খান ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট আদালতে হাজির হয়ে জানান, ঔষধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার অদক্ষতা ও অযোগ্যতা প্রমাণ হওয়ায় তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

মনজিল মোরসেদ পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ৩১ মার্চ পৃথক আদেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম এ দুই কর্মকর্তাকে ‘তিরস্কার’ লঘু দণ্ড দিয়ে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারসহ বিভাগীয় মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেন।

“এরপর তারা ফের চাকরি শুরু করেন। আদালত আবেদনের উপর শুনানি করে ওষুধ প্রশাসনে তাদের চাকরির উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তবে তাদের অন্য কোথাও পদায়ন করতে পারবে।”