এনামুল বাছিরের জন্য দুদকের মহাপরিচালক পদ রাখার আদেশ প্রত্যাহার

ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের জন্য মহাপরিচালক পদ খালি রাখতে আগের দেওয়া আদেশ তুলে নিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2019, 05:53 PM
Updated : 11 July 2019, 06:02 PM

বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। খন্দকার এনামুল বাছিরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ কামাল হোসেন।

আদেশের পর খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাময়িক বরখাস্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির পদোন্নতি চেয়ে একটা রিট করেছিলেন গত ২ জানুয়ারি। আদালত তার রিট আবেদনে রুল জারি করেছিল।

এরপর গত ২৯ জানুয়ারি খন্দকার এনামুল বাছির আরেকটা অন্তর্বর্তী নির্দেশনাও নিয়েছিলেন। সে আদেশে আদালত একটি মহাপরিচালক পদ খালি রাখতে নির্দেশ দিয়েছিল।

“সে অদেশটি আজ বাতিল করেছেন। অর্থাৎ দুদক এখন ওই পদে যে কাউকে পদোন্নতি দিতে পারবে।”

কী যুক্তিতে আগের আদেশটি বাতিল করা হয়েছে জানতে চাইলে দুদক আইনজীবী বলেন, “আমরা কাগজপত্র দেখিয়ে আদালতকে বললাম যে, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একটা প্রসিডিংস চলছে। এ অবস্থায় তার প্রমোশনের তো প্রশ্নই অসে না। আদালত আমাদের বক্তব্য আর কাগজপত্র দেখে আগের আদেশটি ভ্যাকেট করে দিল।”

এনামুল বাছিরের আইনজীবী কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “মহাপরিচালক পদে পদোন্নতি পেতে দুদকের নিস্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে গত জানুয়ারিতে রিট করেন এনামুল বাছির। কেন তাকে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত।

“পরে আাদলত আরেকটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন যে, দুদকের আটটি মহাপরিচালক পদের মধ্যে একটি তার জন্য খালি রাখতে। আজকে রুলটা শুনানির জন্য ধার্য ছিল। যেহেতু ইতোমধ্যে তিনি সাসপেন্ড হয়েছেন। সে কারণে তার জন্য পদ খালি রাখার আদেশটি ভ্যাকেট করা হয়েছে।”

এখন এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের পর ওই রুলের শুনানি হবে।

“যদি তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হন তাহলে রুল শুনানি হবে। আর তা না হলে রুলটা অকার্যকর হয়ে যাবে।”

তদন্ত শেষ হতে মাস খানেক সময় লাগবে, দুদক আইনজীবীর কাছ থেকে তা জানার পর আদালত আগামী ২৫ আগস্ট রুল শুনানির তারিখ রেখেছে।

এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় গত বছরের জানুয়ারিতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ডিআইজি মিজানুর রহমানকে।

এর চার মাস পর তার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক; এক হাত ঘুরে সেই অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান কমিশনের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির।

সেই অনুসন্ধান চলার মধ্যেই ডিআইজি মিজান গত ৮ জুন দাবি করেন, দুদক কর্মকর্তা বাছির তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন।

এর পক্ষে তাদের কথপোকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ একটি টেলিভিশনকে দেন তিনি। ওই অডিও প্রচার হওয়ার পর দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা।

এই প্রেক্ষাপটে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন, কমিশনের তথ্য পাচার ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে খন্দকার এনামুল বাছিরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে দুদক।

পরে ওই অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বে থাকা দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা গত ২৬ জুন বাছিরের বিদেশ গমনের ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করেন।

‘এনামুল বাছির দেশত্যাগ করতে পারেন’ এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শককে একটি চিঠিও দেন তিনি।

সেখানে বলা হয়, “ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির (খন্দাকার এনামুল বাছির) ঘুষ লেনদেন ও মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের সত্যতা দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানের প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে।

“তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বক্তব্য গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। ইতোমধ্যে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য তার বরাবর নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে, তিনি সপরিবারে দেশত্যাগ করে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।”