যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর না আমৃত্যু- রায় যে কোনো দিন

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ আমৃত্যু নাকি ৩০ বছর কারাবাস, তা নির্ধারণের জন্য করা রিভিউ আবেদনের উপর আপিল বিভাগে শুনানি শেষ হয়েছে, এখন যে কোনো দিন রায় হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2019, 03:06 PM
Updated : 11 July 2019, 03:06 PM

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে আবেদনটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে।

রিভিউ আবেদনকারী পক্ষ, রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শোনার পাশাপাশি শুনানিতে আদালত অ্যামিচি কিউরিদের (সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ চার আইনজীবী) বক্তব্যও শোনে।

আবেদনকারী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন ও মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

অ্যামিচি কিউরিরা হলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ আবদুর রেজাক খান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও সমিতির বর্তমান সভাপতি এ এম আমিনউদ্দিন।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কত বছর, সে বিষয়ে আপিল বিভাগের দুটি রায়ে দুই রকম সিদ্ধান্ত দেওয়ায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পুনর্বিবেচনার এই আবেদন করেন কারাবন্দি মানিকগঞ্জের আতাউর রহমান।

শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, যাবজ্জীবন সাজার একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকতে হবে। বাংলাদেশের আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হিসেবে ৩০ বছর বলা আছে, যা রেয়াত পাওয়ার পর সাড়ে ২২ বছর হয়।

তিনি বলেন, “ভারতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হিসেবে আমৃত্যু কারাদণ্ড করা হয়েছে। এটা আইন করে করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে আইনে ৩০ বছর বলা আছে। এটা যদি পরিবর্তন করতে হয় তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ (এ), ৪০১ ও ৪০২ ধারা এবং দণ্ডবিধির ৫৫ ধারা সংশোধন করতে হবে। এছাড়াও কারাবিধি সংশোধন করতে হবে।”

সাভারে ২০০১ সালে জামান নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় ২০০৩ সালে ঢাকার একটি আদালত আতাউরের পাশাপাশি কামরুল ও আনোয়ার নামের আরও দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এ সাজার বিরুদ্ধে আতাউর ও আনোয়ার হাই কোর্টে আপিল করেন। হাই কোর্ট ২০০৭ সালে তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেয়।

এর বিরুদ্ধেও আতাউরসহ আসামিরা আপিল করেন। শুনানি শেষে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আসামিদের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দেয়।

পরে ওই বছরের ৬ নভেম্বর রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়; সে রায়ে বলা হয়, দণ্ডবিধির ৫৩ ধারা ও ৪৫ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে আমৃত্যু কারাবাস। এর ফলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত সবাইকে আমৃত্যু কারাগারে থাকতে হবে।

তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সিনহা বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও বলতেন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে আমৃত্যু কারাবাস।

আতাউরের রিভিউ আবেদনে বলা হয়, “আপিল বিভাগের আগের রায় বাতিল না করেই এ রায় দেওয়া হয়েছে। ফলে রায়ের ব্যাখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। এছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ (ক) ধারার কার্যকারিতা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির ক্ষেত্রে স্থগিত করা সমীচীন হয়নি। এটা দূর হওয়া প্রয়োজন।”