রূপপুরের ব্যয় গড়াল আদালতে

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ভবনে আসবাবপত্র ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র তোলার অস্বাভাবিক খরচ তদন্তে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন চেয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2019, 12:17 PM
Updated : 17 June 2019, 01:36 PM

নির্মাণাধীন এসব ভবনে আসবাবপত্র ও আনুষঙ্গিক কাজের দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়ে বিচারিক তদন্ত চেয়ে করা এক রিট আবেদনে আদালত তদন্ত শেষে প্রতিবেদন চেয়ে এর শুনানি ‘স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি)’ রেখেছে।

সোমবার বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর হাই কোর্ট বেঞ্চে এই শুনানিতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন সাইয়্যেদুল হক সুমন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য নির্মানাধীন গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীর নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ও তা ভবনে তোলায় অনিয়ম নিয়ে গত ১৬ মে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

তার পরিপ্রেক্ষিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় রোববার দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই দিনই হাই কোর্টে রিট আবেদনটি করেন সুমন।

শুনানিতে তিনি একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি বা একটি বিচারিক তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারা সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। এই রিপোর্ট দুটি আগে আসুক। তারপর যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সে পর্যন্ত স্ট্যান্ডওভার রাখা যেতে পারে।”

এরপর আদালত মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদন দেখার জন্য শুনানি মুলতবির আদেশ দেয়।

এদিকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের পাওনা পরিশোধ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়ার কথা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

কী ছিল সংবাদ প্রতিবেদনে

‘কেনা-তোলায় এত ঝাঁজ’ শিরোনামে গত ১৬ মে প্রকাশিত ওই সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীতে ২০ তলা ১১টি ও ১৬ তলা আটটি ভবন হচ্ছে। এরই মধ্যে ২০ তলা আটটি ও ১৬ তলা একটি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ২০ তলা ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য প্রতিটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর ভবনে বালিশ ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিটি রেফ্রিজারেটর কেনার খরচ দেখানো হয়েছে ৯৪ হাজার ২৫০ টাকা। রেফ্রিজারেটর ভবনে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১২ হাজার ৫২১ টাকা। একেকটি খাট কেনা দেখানো হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৫৭ টাকায়। আর খাট উপরে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১০ হাজার ৭৭৩ টাকা।

এছাড়া প্রতিটি টেলিভিশন কেনায় খরচ দেখানো হয়েছে ৮৬ হাজার ৯৭০ টাকা। আর টেলিভিশন উপরে ওঠাতে দেখানো হয়েছে ৭ হাজার ৬৩৮ টাকার খরচ। বিছানার খরচ ৫ হাজার ৯৮৬ টাকা দেখানো হয়েছে; তা ভবনে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ৯৩১ টাকা। প্রতিটি ওয়ারড্রব কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫৯ হাজার ৮৫৮ টাকা। আর তা ওঠাতে দেখানো হয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৯ টাকার খরচ।

এরকম বৈদ্যুতিক চুলা, বৈদ্যুতিক কেটলি, রুম পরিষ্কারের মেশিন, ইলেকট্রিক আয়রন, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি কেনাকাটা ও ভবনে তুলতে অস্বাভাবিক খরচ দেখানো হয়েছে বলে ওই সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়।