‘মাটি ও মানুষের কথা বলেছেন কবি হায়াৎ সাইফ’

কবিতায় নৈর্ব্যক্তিক ব্যঞ্জনায় ব্যক্তির অন্তর্গত আর্ত-অবয়ব ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে কবি হায়াৎ সাইফ পরোক্ষভাবে দেশ, মাটি ও মানুষের কথাই তুলে ধরেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তার স্মরণসভায় আগত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2019, 10:55 AM
Updated : 20 May 2019, 10:55 AM

গত ১২ মে কবি প্রয়াত হায়াৎ সাইফের স্মরণে সোমবার সকালে বাংলা একাডেমি এই সভার আয়োজন করে।

বাংলা একাডেমির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই স্মরণসভায় স্মৃতিচারণে অংশ নেন কবি আসাদ চৌধুরী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার, কবি কাজী রোজী, কবি জাহিদুল হক, ফ র মাহমুদ হাসান, সাবেক কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদ, কবি আসাদ মান্নান এবং কবি হায়াৎ সাইফের দুই ছেলে জিসান সাইফ এবং মেহরান সাইফ।

হায়াৎ সাইফের স্ত্রী তাহমিনা ইসলাম লাকি এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক আমিনুর রহমান সুলতান। সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।

কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, “ষাটের দশকের বিশিষ্ট কবি ও গদ্যকার হায়াৎ সাইফ। প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘সন্ত্রাসে সহবাস’ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিকতম কবিতায় তিনি তার  স্নিগ্ধ ও পেলব স্বাক্ষর রেখে গেছেন। ”

হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, “কবিতায় নৈর্ব্যক্তিক ব্যঞ্জনায় ব্যক্তির অন্তর্গত আর্ত অবয়ব যেমন তিনি সুদক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন তেমনি পরোক্ষতার মুদ্রায় দেশ, মাটি ও মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। গদ্য রচনায়ও তার সাফল্য সামান্য নয়।”

“হায়াৎ সাইফের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘উক্তি ও উপলব্ধি ’ প্রমাণ করে মৌলিক ধ্যান ও ভাবনাশীল গদ্যের কারুকার হিসেবে তার বিশিষ্টতা। পাশাপাশি গবেষণাগ্রন্থ সংরক্ষণবাদ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার মেধা ও মননের সাক্ষ্য বহন করে। ”

কবি হায়াৎ সাইফের জীবন ও কৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে তার রচনা সংরক্ষণ এবং একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের দাবি আসে এই স্মরণসভা থেকে।

লিখিত বক্তব্যে এইচ টি ইমাম বলেন, “সজ্জন, সদালাপী এই মানুষটি কখনো খ্যাতির মোহে ধাবিত হননি, কোন প্রত্যাশা বা উচ্চাকাক্সক্ষার কাছেও নিজের মনোজগতেক বিসর্জন দেননি। নিজের আজন্ম বিশ্বাস, ভাললাগা ও ভালবাসাকে সার্বজনীনতায় লীন করেছেন। নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন সময়ের বহমান গতিধারায়, সৃষ্টি কল্যাণে। ”

সভাপতির বক্তব্যে রামেন্দু মজুমদার বলেন, “হায়াৎ সাইফ বর্ণাঢ্য কর্মজীবন ও সাহিত্যকৃতির অধিকারী ছিলেন। জ্ঞানযোগী  মানুষ হিসেবে তার কোনো তুলনা ছিল না। তার অনন্য কবিতাকৃতির যথাযথ স্বীকৃতি তিনি পাননি। কিন্তু এই নিয়ে কখনও তার কোনো আক্ষেপ ছিল না। বরং সৃষ্টি, সুন্দর এবং কল্যাণের পথে তিনি সবসময় নিজেকে নিবেদিত রেখেছেন।”

১৯৪২ সালে ঢাকায় জন্ম হায়াৎ সাইফের। সাইফুল ইসলাম খান সাহিত্যাঙ্গনে হায়াৎ সাইফ নামেই পরিচিত ছিলেন।

গত শতকের ষাটের দশক থেকে লেখালেখির মাধ্যমে সাহিত্যাঙ্গনে হায়াৎ সাইফের প্রবেশ। ১৯৬২ সালে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় তৎকালীন সমকালে । আর ১৯৮৩ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সন্ত্রাসে সহবাস’ প্রকাশিত হয়।

তার ১৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে যার মধ্যে কবিতার সংকলন আটটি আর প্রবন্ধ সংকলন দুইটি। এছাড়া বিভিন্ন সাময়িকীতে তার অসংখ্য লেখাসহ ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায়ও তার কাব্যগ্রন্থ রয়েছে।

সাহিত্যে অবদানের জন্য কবি হায়াৎ সাইফ ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।

লেখালেখির পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ স্কাউটসের সাবেক জাতীয় কমিশনার (জনসংযোগ ও প্রকাশনা) এবং আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কাউটসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া স্কাউটিংয়ে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বিশ্ব স্কাউট সংস্থার সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘ব্রোঞ্জ উলফ’ এবং বাংলাদেশে স্কাউটসের সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘রৌপ্য ব্যাঘ্র’ অর্জন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা হায়াৎ সাইফ কর্মজীবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) সদস্য ও পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন।