তবে মা ও ছেলে-মেয়ের মধ্যে কে কাকে খুন করেছে, আর কে আত্মহত্যা করেছে, তা বুঝতে ভিসেরা প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করার কথা বলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ।
বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কেউ বিষ পান করে থাকলে তা ভিসেরা প্রতিবেদনে আসবে। তখন হয়ত স্পষ্ট হবে, কোন দুইজনকে হত্যার পর কে আত্মহত্যা করেছে।”
রোববার রাতে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে উত্তরখানের ময়নারটেক এলাকার এক বাসার দরজা ভেঙে ওই তিনজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মা ও মেয়ের লাশ ছিল বিছানায়; আর ছেলের লাশ মেঝেতে পড়ে ছিল। লাশগুলো ফুলতে শুরু করেছিল বলে দিন দুই আগে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
সোমবার তিন জনের ময়নাতদন্তের পর ডা. সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ওই তিনজনের মধ্যে মা জাহানারা বেগম মুক্তা (৪৮) এবং তার প্রতিবন্ধী মেয়ে আতিয়া সুলতানা মিমের (১৯) মৃত্যু হয়েছে শ্বাসরোধে।
আর জাহানারার ছেলে মহিব হাসান রশ্মির (২৭) মৃত্যু হয়েছে গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে।
উত্তরখান থানা পুলিশ জানিয়েছিল রশ্মির গলার বাঁ থেকে ডান দিকে ধারালো অস্ত্রের পোচ ছিল। পাশেই পড়ে ছিল একটি রক্তমাখা বটি।
তাতে লেখা ছিল, ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য আমাদের ভাগ্য এবং আমাদের আত্মীয় স্বজনের অবহেলা দায়ী। আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের সম্পত্তি দান করা হোক।’
পুলিশের দক্ষিণখান জোনের সহকারী কমিশনার এফএম ফয়সল বলেছিলেন, “আমাদের মনে হয়েছে, একটি চিরকুট ছেলের হাতে লেখা, অন্যটি মায়ের। তবে লেখাগুলো আসলেই তাদের কিনা, তা যাচাই করে দেখা হবে।”
আর উত্তরখানের ওসি খলিলুর রহমান বলেছিলেন, রশ্মির বাবার অকস্মিক মৃত্যুর পর অর্থ সঙ্কটে ছিল পরিবারটি।
“এক সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ায় এবং আরেক সন্তানের চাকরি না হওয়ায় অনটন আর হতাশা হতাশা থেকে তারা আত্মহত্যা করে থাকতে পারে।”
তবে তারা সত্যিই আত্মহত্যা করেছেন, না কি তাদের হত্যা করা হয়েছে- সে বিষয়টি পুলিশ আরও তদন্ত করে দেখবে বলে জানিয়েছিলেন ওসি।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ মঙ্গলবার উত্তরখানের ওই বাড়ির অবস্থা ঘুরে দেখেন।
বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যেখান থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, সেই কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল।
“বাইরে থেকে কারো ঢোকার বা বের হওয়ার অন্য কোনো পথ ওই ঘরে নেই। তাই আমরা মনে করছি, তিনজনের মধ্যে প্রথম দুজনকে হত্যা করা হয়েছে। পরে তৃতীয়জন আত্মহত্যা করেছে।”
মহিব হাসান রশ্মিদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের জগন্নাথপুরে। তার বাবা ইকবাল হোসেন মারা গেছেন ২০১৬ সালে। আত্মীয়দের সঙ্গে জমি নিয়ে সমস্যা ছিল বলেও এলাকাবাসীর বরাতে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
জাহানারার ভাই মনিরুল হক জানিয়েছিলেন, তার বোন জামাই বিআরডিবিতে চাকরি করতেন। মূলত তার মৃত্যুতে পরিবারে ‘হতাশা নেমে আসে’।
এ মাসের শুরুতে ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন রশ্মি। এমবিএ শেষ করার পরও তিনি হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন বলে তার মামার ভাষ্য।
উত্তরখানের ওসি বলেছিলেন, দিন দশেক আগে রশ্মি ফেইসবুকে হতাশা প্রকাশ করে একটি পোস্ট দেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘জীবনের জন্য টাকা আর টাকাই সব’।
তিনজনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় জাহানারার ভাই মনিরুল মঙ্গলবার উত্তরখান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেখানে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।