‘ইমারত নির্মাণে সরকারের দায়িত্ব ও নাগরিকদের করণীয়’ বিষয়ে শনিবার এক ‘মিট দ্য প্রেস’এ গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সরকারের এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি- ডিআরইউর সাগর-রুনি মিলনায়তনে পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ সরকারের বিভিন্ন পরিসেবাভিত্তিক সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজন করে।
মন্ত্রী রেজাউল করিম বলেন, “ঢাকা শহরের অনেক ইমারত আছে যেগুলো একটির সাথে আরেকটি লাগানো। এগুলো মূলত পুরান ঢাকায়। সেগুলোকে রাতারাতি ভেঙে ফেলে নতুন কিছু করা সম্ভব না। আমরা একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। সেটা হচ্ছে রিডেভেলপমেন্ট।
“এ পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা তাদেরকে (পুরান ঢাকাবাসীদের) প্রস্তাব দেব, তাদের বিল্ডিং ভেঙে আমরা মানসম্মত, পরিবেশসম্মত, বিল্ডিংকোডসম্মত ইমারত করে দেব। রেশিও অনুযায়ী মালিকরা যে কয়টা ফ্ল্যাট পেতে পারেন আমরা সে কয়টা তাদের দিয়ে দেব। যাতে পুরান ঢাকায় ঘিঞ্জিমার্কা অবস্থা না থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ জীবন না থাকে।”
রাজধানীতে ঝুঁকিমুক্ত, নিরাপদ ও পরিবেশসম্মত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ -রাজউকের আমূল পরিবর্তনসহ কর্মপন্থা নির্ধারণে বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, “আমরা কতগুলো পরিকল্পনা নিয়েছি। ২৪টি পরিদর্শন দল গঠন করেছে রাজউক। তারা প্রথম পর্যায়ে শুধুমাত্র বহুতল ভবন পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেবে। মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছি, যেখানে সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি আছেন। তদন্তে রাজউক থেকে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। আমরা সকল রিপোর্টগুলো নিয়ে একসাথে বসব।
“একসাথে বসে যারা অভিজ্ঞ অর্থাৎ নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক-আইনজীবীদের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে এটাকে অ্যানালাইসিস করে কর্মপন্থা নির্ধারণ করব।”
প্রাথমিক পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা বিল্ডিংগুলোকে ক্লাসিফাই করতে চাই। এমন বিল্ডিং আছে যে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নেই। তাদের আমরা সময় বেঁধে দিয়ে বলব, এই সময়ের মধ্যে বিল্ডিং কোডে যে ব্যবস্থা অনুমোদন করা হয়েছে সে জাতীয় অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা সমৃদ্ধ করতে হবে। করার পর আমরা আবার ইন্সপেকশনে লোক পাঠাব। তারা দেখে সার্টিফিকেট দেওয়ার পরে আমরা সেই বিল্ডিংকে ব্যবহার উপযোগী ঘোষণা করব।”
বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশে এবার উদ্যোগ নেওয়া হবেও জানান পূর্তমন্ত্রী।
“এবারের ইনক্যোয়ারি রিপোর্ট এবং কার কার ইমারেত কী কী প্রবলেম আছে, কোন কোন অনিয়মের মধ্যে থেকে করেছেন, সেটা আমরা জাতীয় দৈনিকে, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ করব। প্রয়োজনে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রকাশ করব। কারণ এইসব লোকদের স্বরূপ মানুষের জানা উচিৎ।”
মতবিনিময়ে রেজাউল করিম ঢাকায় ৯০ হাজার নির্মাণাধীন ভবনের তথ্য দিয়ে রাজউকে জনবলের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন।
“এই ৭০০ পোস্ট খালির পরেও যে জনবল আছে তা নিয়েই আমাদের চলতে হচ্ছে। বিশাল একটি এরিয়ায় একজন পরিদর্শক অথবা একজন অথরাইজইড অফিসারকে কাজ করতে হচ্ছে। তারপরও আমি বলতে চাই, অতীত ভুলে যান। আমরা এখন কি করতে চাই সেক্ষেত্রে আমাকে সহায়তা করেন।”
রাজউকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির বিষয়ে সতর্ক করে মন্ত্রী বলেন, “কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট এলকায় অবৈধ ইমারত নির্মাণ হলে তিনিই দায়ী হবেন। আমি একটা ফরমেট করে দিয়েছি, প্রতি সপ্তাহে রিপোর্ট হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মকর্তাকে বিল্ডিংয়ের নম্বর দিয়ে প্রতি সপ্তাহে রিপোর্ট দিতে হবে। আমরা অঙ্কুরেই আঘাত হানতে চাই।”
কাজের ক্ষেত্রে আইনি বাধার বিষয়টিও তুলে ধরেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রেজাউল করিম বলেন, “আমাদের প্রায় তিন হাজারের উপরে এভিকশন প্রসেস হাই কোর্টের আদেশে স্থগিত হয়ে আছে। সেক্ষেত্রেও আমাদের অনেক ব্যর্থতা আছে। যে নোটিসটি নিয়ে মামলা সে নোটিসে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নাই।”
রাজউকের প্যানেল আইনজীবীদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী।
“রাজউকের আইনজীবী যারা ছিলেন আমি লক্ষ্য করেছি অনেক আইনজীবীই কমপিটেন্ট না। যারা রাজউকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাদের মোকাবেলা করার মত দক্ষ আইনজীবী রাজউকে ছিল না। এজন্য রাজউকের আইনজীবী প্যানেল সম্পূর্ণ বাতিল করে আমি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি, কমপিটেন্ট আইনজীবীরা যাতে এগিয়ে আসেন। সম্মানজনক সম্মানী দেওয়ার অহ্বান করা হয়েছে।”
মিট দ্য প্রেসে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রুবেল।