ভারতীয় জি নেটওয়ার্কের চ্যানেল বাংলাদেশে বন্ধ

জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা ভারতীয় টেলিভিশন জি নেটওয়ার্কের চ্যানেলগুলো বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2019, 11:08 AM
Updated : 3 April 2019, 03:40 PM

আইন লঙ্ঘন করে বিদেশি টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন কেন প্রচার হচ্ছে- তা জানতে চেয়ে দুটি পরিবেশক প্রতিষ্ঠানকে নোটিস দেওয়ার পর থেকে ওই চ্যানেলগুলো বাংলাদেশে বন্ধ রয়েছে।

সরকার কোনো চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করেনি জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, তারা কেবল প্রচলিত ‘আইন প্রয়োগ’ করেছেন।

‘কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬’ এর উপধারা-১৯(১৩) এর বিধান লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে ডাউনলিংক করা বিদেশি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করায় পরিবেশক (ডিস্ট্রিবিউটর) প্রতিষ্ঠান নেশনওয়াইড মিডিয়া লিমিটেড এবং জাদু ভিশন লিমিটেডকে সোমবার কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। সাত দিনের মধ্যে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্ত্রণালয় থেকে নোটিস পাওয়ার পর পরিবেশক প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের কয়েকটি চ্যানেলের সম্প্রচার বাংলাদেশ বন্ধ করে দিয়েছে।”

ওই কর্মকর্তা বলেন, “মূলত ভারতের যেসব চ্যানেলে বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন প্রচার করা হত সেগুলো বন্ধ করেছে তারা। মন্ত্রণালয় থেকে কাউকে সম্প্রচার বন্ধ করতে বলা হয়নি, বলা হয়েছিল আইন অনুযায়ী বিজ্ঞাপন ছাড়া যেন সম্প্রচার করা হয়।”

কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনের ১৯(১৩) ধারায় বলা হয়েছে, কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বা সঞ্চালন করা যাবে না।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা নোটিস দিয়েছি বিজ্ঞাপন ছাড়া যেন দেখানো হয়। নোটিসের জবাব পাওয়ার প্রেক্ষিতে আমাদের সিদ্ধান্ত হবে।”

হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি কোনো চ্যানেলে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা যায় না। শুধু দেশীয় বিজ্ঞাপন নয়, কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন দেখানো যায় না, এটি হচ্ছে বাংলাদেশের আইন। একই ধরনের আইন ভারত, যুক্তরাজ্য, ইউরোপেও আছে।

“বাংলাদেশে এ আইনটি মানা হচ্ছিল না এবং এ আইনটি প্রয়োগ করা হয়নি। এ কারণে যেটি হয়েছে, বাংলাদেশের টিভিগুলো যে বিজ্ঞাপন পেত তার বড় অংশ চলে গেছে ভারতে।”

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে হাছান বলেন, “আপনাদের (সাংবাদিক) সহযোগিতা চাই, আমরা কোনো নতুন আইন প্রয়োগ করছি না, দেশের প্রলচিত আইন প্রয়োগ করা শুরু কেরছি, দেশর স্বার্থে, দেশের গণমাধ্যমের স্বার্থে, দেশের টেলিভিশনের স্বার্থে, টেলিভিশনের সাথে সম্পর্কিত যারা আছেন, তাদের স্বার্থে।

“আপনারা আমার কাছে অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন অনেক টেলিভিশন চ্যানেলে বেতন দেওয়া হচ্ছে না, তিন মাস ধরে বেতন পায় না, হঠাৎ করে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। আমরা যখন মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি তারা জানিয়েছেন পরিচালনা ব্যয় বেড়ে গেছে, বিজ্ঞাপন ছাড়া টেলিভিশনের কোনো আয় নেই। এই বিদেশি চ্যানেলে যদি বিজ্ঞাপন প্রদর্শন অব্যাহত থাকে তাহলে এখন যে আয় আছে সেটাও কমে যাবে।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইউনিলিভার পাঁচ বছর আগে বিজ্ঞাপন খাতে মাসে ১৫ কোটি টাকা খরচ করত। তার বিচারে, পাঁচ বছরে এটা ২০ কোটি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা না হয়ে ৫ কোটিতে নেমে এসেছে।

“বাকি বিজ্ঞাপন ভারতীয় চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রদর্শন করা হচ্ছে, যেটা আইন বহির্ভূত। এ রকম অনেকগুলো কোম্পানির বছরে ৫০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন অন্য দেশে চলে গেছে।”

বাংলাদেশের শিল্পকে সুরক্ষা দিতেই আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “উদ্যোগ গ্রহণ করেছি এবং এ আইন প্রয়োগ করার আগে দুমাস ধরে প্রচারণা করেছি। তিন দফা নোটিস দিয়েছি। ১ এপ্রিলও যখন দেখতে পেলাম বিদেশি চ্যানেলে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হচ্ছে, তখন আমরা আইন মোতাবেক নোটিস দিয়েছি।

“যেটি তারা (পরিবেশন প্রতিষ্ঠান) করতে পারে- সংশ্লিষ্ট চ্যানেলগুলোর কাছে ক্লিন ফিড চাইতে পারে। অথবা এখানে যন্ত্র স্থাপন করে ক্লিন করে প্রদর্শন করতে পারে।”

এ বিষয়ে কথা বলতে জাদু ভিশন লিমিটেডের নাভিদুল হককে ফোন করা হলে তার সাড়া পাওয়া যায়নি। জাদু ভিশনের হটলাইনে ফোন করা হলে একজন অপারেটর বলেন, জি নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকেই বাংলাদেশে চ্যানেগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এর কোনো কারণ তিনি জানাতে পারেননি।