প্রধানমন্ত্রীর মাঝে হারানো মায়ের চেহারা খুঁজে পেয়েছি: নূর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সামনাসামনি দেখে তার মাঝে ছোটবেলায় হারানো মায়ের চেহারা ‘খুঁজে পেয়েছেন’ বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নূর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2019, 04:26 PM
Updated : 16 March 2019, 05:44 PM

শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে যান ডাকসু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল সংসদের নবনির্বাচিত নেতারা।

কোটা আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে ডাকসুর ভিপি পদে বিজয়ী নূর প্রধানমন্ত্রীর সামনে আবেগময় বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, “আমি শুধু ছাত্রলীগের কর্মীই ছিলাম না, ছোটখাট একটা নেতাও ছিলাম, পোস্টেড ছিলাম। আমি বিভিন্ন গ্রোগ্রামে গিয়েছি। আমি দেখেছি নেত্রীকে।”

আগে শেখ হাসিনাকে দূর থেকে ও টিভিতে দেখার কথা উল্লেখ করে নূর বলেন, “আড়াই বছর বয়সে আমার মা মারা যায়। আমার মায়ের যতটুকু মনে করতে পারি সেটা খুঁজে পেয়েছিলাম আমার প্রাইমারির একজন শিক্ষিকার মধ্যে।

“আর আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখে আমার মনে হয়েছে যে, তার মধ্যে আমার মায়ের চেহারাটা আমি খুঁজে পেয়েছি।”

এ সময় মুহুর্মুহু করতালিতে ভরে ওঠে গণভবনের ব্যাংকোয়েট হল।

গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কদমবুসি করেন ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর। ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

শেখ হাসিনাকে ‘আপা’ সম্বোধন করে এর ব্যাখ্যা দিয়ে নূর বলেন, “আমি আপা বলতে চাইনি। আমি মায়ের ওই জায়গাটাতেই থাকতে চেয়েছিলাম। সবাই, সবাই আপা বলে এজন্য আমার মুখ থেকেও শব্দটা বের হয়েছে।”

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে হারিয়ে বিজয়ী হওয়া নূর বক্তব্যের বেশিরভাগ সময়ই শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করেন। বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রীকে কদমবুসিও করেন তিনি।

ডাকসুর নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের ডাকসুর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান সঞ্জীব চন্দ্র দাস। এরপর বিভিন্ন হল সংসদের ভিপিরা, ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন ও ছাত্রলীগ সভাপতি শোভনের পর বক্তব্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয় নূরকে।

ডায়াসে বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়েই তৃষ্ণার্ত জানিয়ে পানি চেয়ে নেন নুরুল হক নূর।

বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, যার নেতৃত্বে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত এবং তার লিডারশিপের কারণে আমরা দেখেছি যে, বিশ্বের বড় বড় নেতাদের মাঝে তার স্থান করে নিতে পেরেছেন।

“২৮ বছর পরে ডাকসু নির্বাচন দেওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। তিনি রিস্ক নিয়েছেন। কারণ ১৯৯০ পরবর্তী যে সরকারগুলো এসেছে তারা কেউ ডাকসু নির্বাচনের রিস্ক নিতে চাননি।”

শেখ হাসিনার প্রশংসা করে নূর বলেন, “কখনো আমরা তাকে দেখেছি যে ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়ে একজন নারীর ভূমিকায়, আবার কখনো আন্দোলন-সংগ্রামে তার কৃতিত্বের কথা আমরা শুনেছি। আর বঙ্গবন্ধুর কথা শুধু আমরা না, সারা বিশ্বের মানুষ জানে।”

গণভবনে ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নূরুল হক নূরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন মন্তব্য করে এই অগ্রযাত্রায় ডাকসুর পক্ষ থেকে সব সময় তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন নুরুল হক নূর।

তিনি বলেন, “আমরা একটি কথাই বলতে চাই যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কখনো অন্যায়ের পক্ষ নেয়নি। সব সময় ন্যায়ের পক্ষেই ছিল। দেশের সকল মঙ্গলের পক্ষে ছিল। তার সব মঙ্গল কাজের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা থাকবে। ডাকসুর নবনির্বাচিত আমরা যারা রয়েছি তার সেই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা সহযোগিতা করব।”

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও কথা বলেন নবনির্বাচিত ভিপি নূর।

তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে প্রধান সমস্যাটা হল আবাসিক সমস্যা। আপনি এটার প্রতি একটু সদয় দৃষ্টি দেবেন।”

নিজের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সমালোচনায় পড়েছেন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নূর।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি ছাত্রলীগের স্কুল কমিটিতে দপ্তর সম্পাদক ছিলাম। ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে থাকা অবস্থায় উপ-মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পদে ছিলাম। অথচ কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে, বিনয়ের সঙ্গে বলব যে, আমার ছাত্রলীগের ভাই-বন্ধুরাও কেন যেন আমাকে জামাত-শিবির বানানোর জন্য অপপ্রচার তুলেছিল।

“আমার পুরো পরিবার ছিল আওয়ামী লীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের।”  

শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব যে, আপনি বাংলাদেশকে যেভাবে এগিয়ে নিচ্ছেন। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আপনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন ডাকসুসহ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, সেটা আপনি কার্যকর করবেন।”

নূর বলেন, “বঙ্গবন্ধু শুধু আওয়ামী লীগের নেতা নন, তিনি সারা বাংলাদেশের ও সারা বিশ্বের নেতা। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে এবং সংখ্যায় যদি একজনও হয় আমরা সেটা মেনে নেব। সুতরাং যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলবেন তারা এ জিনিসিটা ধারণ করবেন।

“যারা দেশরত্ন শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে পরিচয় দেবেন, তার যে শ্লোগান ‘উচ্চ আদর্শ, সাদামাটা জীবন এটাই ছাত্র রাজনীতির বৈশিষ্ট্য’ এটা ধারণ করবেন। আমি মনে করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর এই একটা বাক্য শুধু ছাত্রলীগের নয়, ছাত্র রাজনীতির সবারই মনে রাখা উচিৎ।”

উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য পাঠ্যসূচির সংস্কার চেয়ে নূর বলেন, “আমি চাই যে শিক্ষা ব্যবস্থার একটা আমূল পরিবর্তন আপনার হাতেই ঘটুক। কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।”

নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “১০০ শতাংশ শুদ্ধতা সব কাজে পাওয়া যায় না। কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকবে।”

প্রতি বছর যেন ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা থাকে, সে অনুরোধ জানান নূর।

বক্তব্য শেষে কদমবুসি করার আগে নূর বলেন, “আসলে প্রধানমন্ত্রীর অনেক প্রটোকল। আমার প্রথমেই ইচ্ছা ছিল যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আগেই সালাম করা। কিন্তু তার নিরাপত্তারক্ষীরা রয়েছে। তাতে বিঘ্ন ঘটবে কি না এজন্য যাইনি।

“যেহেতু আমার মা নাই, আমি বলেছি, আমার সেই মাতৃত্বের ছায়াটা নেত্রীর মধ্যে।”

এরপরই প্রধানমন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন নূর। এ সময় প্রধানমন্ত্রীও তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।

বক্তব্যের আগে ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে সামনের সারিতে বসে থাকলেও বক্তব্যের পর নূরকে ডেকে প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসানো হয়।