‘ও এত আদরের ছিল… এত আদরের’

বাবা আর চাচাদের খুব আদরের ছিল তিন বছরের আরাফাত আলী। মাকে বাসায় রেখে প্রায়ই বাপ-চাচাদের দোকানে এসে বসে থাকত সে।

মাসুম বিল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2019, 11:00 AM
Updated : 21 Feb 2019, 12:04 PM

বাবা মোহাম্মদ আলী আর এক চাচা অপু রায়হানের সঙ্গে বুধবার আগুনে পুড়ে লাশ হয়েছে আরাফাতও।

বুধবার রাতে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে প্রাণে বেঁচে গেছেন আরাফাতের আরেক চাচা দীপু হোসেন। ভাতিজা আর দুই ভাইকে রেখে আগুন লাগার ঠিক আগেই দোকান থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি।

চকবাজার চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদ মার্কেটের নিচতলায় গামছা-তোয়ালে-তসবিহসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের দোকান ছিল পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জের বাসিন্দা দীপুদের।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে ভাই-ভাতিজার লাশ নিতে এসে দীপু বলছিলেন, “আমাকে বলছিল, ‘চাচ্চু তোমাকে কিস করি?’ আমি বলছি করো। ভাইস্তা আমার অল্প অল্প কথা বলা শিখছিল।

“ও এত আদরের… এত আদরের… ওরে ছাড়া বাচমু কেমনে…”

পুরান ঢাকার চকবাজারে চার তলা একটি বাড়িসহ কয়েকটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অর্ধ শতাধিক মানুষর মৃত্যু হয়েছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

নিজে বেঁচে ফিরলেও ভাতিজা-ভাইদের সঙ্গে শেষবার হওয়া কথাগুলো দীপুর মাথায় ঘুরছে; আগুনের তীব্রতায় দৌঁড়ে পালাতে হয়েছিল তাকে।

দীপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দোকান বন্ধ করে দেওয়ার সময় তহন। আমি ভাইকে বললাম, বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাইতাছি, তোমরা বন্ধ করে আসো।

“দোকান থেকে মাত্র ৪০ কদম দূরে আসছি, তখনই বিস্ফোরণের শব্দ। দাউদাউ করে আগুন জ্বইল্যা উঠল। আরেকটু হলে আমিও মরতে পারতাম!”

পুরান ঢাকার চকবাজারে চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত একজনের লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চুড়িহাট্টার ওয়াহিদ চেয়ারম্যানের চারতলা ভবনে প্রথমে আগুন লাগে, এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে পাশের একটি, পেছনের একটি এবং সরু গলির বিপরীত পাশের দুটি ভবনে।

ঠিক কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল তা স্পষ্ট না হলেও এসব ভবনে বিভিন্ন দোকানের পাশাপাশি রাসায়নিক, প্লাস্টিক ও প্রসাধন সামগ্রীর গুদামের কারণে আগুন সর্বগ্রাসী রূপ পেয়েছে বলে অনেকের মত মনে করছেন দীপুও। 

পুরান ঢাকার চকবাজারে চার তলা একটি বাড়িসহ কয়েকটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অর্ধ শতাধিক মানুষর মৃত্যু হয়েছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম না সরায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

দুই ভাই আর ভাতিজার লাশের খোঁজে এসে মর্গের সামনে কয়েক ঘণ্টা ধরে বিলাপ করতে থাকেন দীপুর বোন মোসাম্মৎ জরিনা। স্বজনরা সান্ত্বনা দিয়ে থামাতে পারছিলেন না তার আহাজারি।

তিনি বারবার বলছিলেন, “আল্লাহ তোমার এ কেমুন বিচার… একলগে তিনজনরে নিয়া গেলা…!”