ভোটের প্রচার শুরুর পরপরই তিন জেলায় সংঘাত

একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পরপরই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘাত বেঁধেছে সিরাজগঞ্জ ও নেত্রকোনায়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2018, 05:50 PM
Updated : 10 Dec 2018, 06:15 PM

সিরাজগঞ্জে কয়েকটি স্থানে দুই দলের কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। ভাংচুর হয়েছে বিএনপির একটি কার্যালয়।

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ভাংচুর হয়েছে আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয়। সংঘর্ষে আহত হয়েছে অন্তত তিনজন।

এছাড়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নানুপুর বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট মনোনীত প্রার্থীর অনুসারীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে কমপক্ষে সাতজন আহত হয়েছে।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে সোমবার প্রতীক বরাদ্দ হয়, এরপর সারাদেশেই প্রচারে নেমে পড়েন প্রার্থীরা।

এর মধ্যেই সন্ধ্যায় দুর্গাপুরের মাকরাইল বাজারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাংচুর হয়।

দুর্গাপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, মাকরাইল বাজারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েকজন সমর্থকের মধ্যে তর্ক বাঁধে। এক পর্যায়ে উভয় দলের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়ান।

“এ সময় আওয়ামী লীগের তিনজন আহত হন। বিএনপির লোকজন হামলা চালিয়ে বাজারে থাকা চণ্ডীগড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাংচুর করেছে।”

আহতদের দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম জানা যায়নি।

সিরাজগঞ্জ-২ (সদর ও কামারখন্দ) আসনের কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ ঘটে। এতে উভয় দলের অন্তত ১০ জন আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাই কোর্ট সিরাজগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার খবরে চক শিয়ালকোল এলজিইডি মোড়ে মিছিল বের করেন তার সমর্থকরা।

এ সময় দুটি হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে বিএনপিকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
সংঘর্ষে ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চার্লি, বিএনপিকর্মী শফিকুল ইসলাম, রেজাউল কামরুল পান্নাসহ ১০ জন আহত হন।

প্রায় একই সময়ে উত্তর সারটিয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করার চেষ্টা করলে একদল লোক বাধা দেয়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। 

অন্যদিকে ধুকুরিয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল করার সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন ছানুকে মারপিট করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম আজম তালুকদার বাবলু বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। এতে  আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের অন্তত ৪/৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

শিয়ালকোল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুর-ই আলম বলেন, চক শিয়ালকোল এলাকায় বিএনপির মিছিলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বিএনপির ৭/৮ জন নেতাকর্মীকে আহত করেছে। এ সময় ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জিব্রাইলের বাড়িঘরও ভাংচুর করা হয়।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, শিয়ালকোলে বেশ কয়েকটি স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা করা হয়েছে।  সয়দাবাদে এক বিএনপি নেতাকে মারপিট করেছে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন।

সদর থানার ওসি মোহাম্মদ দাউদ বলেন, পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

কামারখন্দ উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে ভাংচুরের জন্য দলটি আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে।

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজাতে রাব্বী উথান অভিযোগ করেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জামতৈল রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থিত বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালায়।

“এ সময় তারা অফিসের চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করে এবং ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে দেয়।”

ঘটনার সময় কার্যালয়ের ভিতরে দলের কেউ ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, এ সময় পাশের চায়ের দোকানে বসে থাকা জামতৈল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল লতিফ মুহুরীকে মারপিট করে গুরুতর আহত করে হামলাকারীরা।

হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে কামারখন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার শেখ বলেন, বিএনপি নেতারা মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আওয়ামী লীগের কেউ ঘটনার সাথে জড়িত নয়।

কামারখন্দ থানার ওসি হাবিবুল ইসলাম বলেন, বিএনপি অফিসে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার পর থেকে পুলিশ সর্তক অবস্থায় রয়েছে।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে সংঘর্ষ বাঁধে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নানুপুর বাজার এলাকায়। এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে গুলি ছোড়ার অভিযোগও করেছে।

আহতদের মধ্যে দুজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন নানুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আজম ও অন্যজন মো. করিম। বাকিদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জোটের প্রার্থী তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। তিনি এক সময় আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন; পরে একবার বিএনপিতেও যোগ দিয়েছিলেন।

অন্যদিকে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি সদস্য এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। সোমবার তিনি আপেল প্রতীক বরাদ্দ পান। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজাদী বাজার এলাকায় পেয়ারুল ইসলামের সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল করে। এরপর তারা গাড়ি নিয়ে নানুপুর বাজার এলাকায় পৌঁছায়। তারপরই বাঁধে সংঘাত।

পেয়ারুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সন্ধ্যায় আজাদী বাজার এলাকায় ধর্মপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মাহমুদুল হকের বাড়িতে নজিবুল বশরের অনুসারীরা হামলা চালায়। 

“এসময় হামলাকারীরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ খবর পেয়ে আমরা সদর থেকে উনার বাড়িতে ছুটে যাই। সেখান থেকে ফেরার পথে তিন কিলোমিটার দূরে নানুপুর বাজার এলাকায় আমাদের ওপর হামলা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে নানুপুর বাজারে একটি অ্যাম্বুলেন্স, দুটি প্রাইভেট কার ও চার-পাঁচটি মোটর সাইকেল নিয়ে তারা আমাদের গাড়ি বহরে হামলা করে। 

"এক পর্যায়ে হামলাকারীরা থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরীর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করে। তারা নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর অনুসারী।" 

এ হামলায় নানুপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আজম ও করিম আহত হন বলে জানান পেয়ারুল।

এদিকে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, “যাদের মধ্যে সমস্যা হয়েছে তারা সবাই নৌকার অনুসারী। ধাওয়া হয়েছে এটা ঠিক। তবে ওই পক্ষ গুলি করেছে। এরপর স্থানীয় লোকজনসহ তাদের ধাওয়া দেয় বলে শুনেছি। কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।" 

আওয়ামী লীগে মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ নেই দাবি করে মাইজভান্ডারি বলেন, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা আজ সকালেও টেলিফোনে আমাকে নির্বাচনের কাজ করে যেতে বলেছেন। 

"পেয়ারুল ইসলাম মনোনয়ন প্রত্যাহারের কথা ছিল, কিন্তু করেননি। আমার কাজ সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। নৌকার লোকদের সাথে মিলেমিশে নির্বাচন করা।"

থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ও পরে বহিষ্কৃত এইচ এম আবু তৈয়ব নৌকা প্রতীক পাওয়া তরিকত নেতা নজিবুল বশরের অনুসারী।

অন্যদিকে থানা কমিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া পেয়ারুল ইসলামের অনুসারী।

ঘটনার বিষয়ে ফটিকছড়ি থানার ওসি বাবুল আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাতজন আহত হয়েছেন। ছয়জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন। অন্যজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সংঘর্ষ কাদের মধ্যে এবং গুলি বিনিময় হয়েছে কি না- জানতে চাইলে ওসি বাবুল আক্তার বলেন, “আমরা হাসপাতালে যাচ্ছি। আহতদের দেখে বিস্তারিত বলতে পারব।”