গ্যাস দুর্ঘটনা এড়াতে কেন ব্যবস্থা নয়, হাই কোর্টের রুল

পাইপ লাইনে ও সিলিন্ডারে প্রাকৃতিক গ্যাস বা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2018, 08:55 AM
Updated : 3 Dec 2018, 08:55 AM

জনস্বার্থে দায়ের করা একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ রুল জারি করে।

পাইপ লাইনে ও সিলিন্ডারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে ‘বিবাদীদের ব্যর্থতা’ কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রিট আবেদনকারী আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাইপলাইনে ছিদ্র ও সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা অহরহ ঘটছে। এতে মর্মান্তিক মৃত্যু হচ্ছে। কোনো কোনো পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে এসব দুর্ঘটনায়। এছাড়া গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে কেউ কেউ স্বাভাবিক জীবন থেকে ছিটকে পড়ছেন। এ বিষয়গুলো কোনোভাবেই কাম্য নয়।

“আশ্চর্যের বিষয় হল এ ধরনের দুর্ঘটনার দায় কেউ নিচ্ছে না। নিহতদের পরিবার বা আহত কেউ ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না। যে কারণে পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদন করেছিলাম। আদালত প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছেন।”

গত ১৯ নভম্বর দৈনিক পত্রিকা সমকালে ‘মৃত্যুফাঁদ থেকে সাবধান, গ্যাস পাইপ লিকেজ ও সিলিন্ডার বিস্ম্ফোরণে প্রাণহানি, দায় নিচ্ছে না কেউ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

ওই প্রতিবেদনে সর্বশেষ গত ১৪ নভেম্বর যাত্রাবাড়ীতে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের ছিদ্র থেকে নির্গত গ্যাসে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় এক শিশুসহ দুজনের মৃত্যু ও পাঁচজনের দগ্ধ হওয়ার ঘটনা তুলে ধরা হয়।

এর আগে গত ২ নভেম্বর গ্যাসের আগুনে আশুলিয়ায় একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “গ্যাসের আগুনের কারণে এমন মর্মন্তুদ দুর্ঘটনার দায় নিচ্ছে না কেউ। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা যন্ত্রণাকাতর জীবনের দায়ভার বয়ে বেড়াচ্ছেন।”

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে গ্যাস দুর্ঘটনায় ১০৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে গ্যাসলাইনের ছিদ্র থেকে ৫৫টি এবং এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে ৪৮টি ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলেই মারা গেছে শিশুসহ ছয়জন; হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ৩১ জনকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় যারা হাসপাতালে মারা গেছেন, তাদের হিসাব ফায়ার সার্ভিসের খাতায় নেই।

সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪০-৪৫ বছরের বেশি পুরনো গ্যাস বিতরণ লাইনও রয়েছে ঢাকায়। এসব গ্যাসলাইনের ব্যাপারে তেমন তদারকি নেই তিতাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির। গ্যাসলাইনে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করা এবং বাড়ির মালিক ও ভাড়াটেদের অসাবধানতা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এ ছাড়া বাসাবাড়িতে সঠিকভাবে গ্যাসলাইন সংযোগ না হওয়া, এলপিজি সিলিন্ডার এবং চুলা সঠিকভাবে না লাগানোর কারণেও অগ্নিকাণ্ড ঘটছে।