বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে উপেক্ষিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে যৌনকর্মীরাই সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হন বলে মনে করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।
Published : 08 Nov 2018, 10:40 PM
এই বৈষম্য ঘোচাতে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার যৌনকর্মীদের আইনগত সমঅধিকার ও সম্মান নিশ্চিতকরণে সেভ দ্য চিলড্রেন এবং লাইট হাউজের যৌথ উদ্যোগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে আয়োজিত এডভোকেসি সভায় রিয়াজুল হক বলেন, “সবচেয়ে বেশি ডিসক্রিমিনেশনের শিকার মনে হয় যৌনকর্মীরা।
“তাদের জীবিকার এই যে একটা পথ, এটা করতে গিয়ে তারা পদে পদে লাঞ্ছিত হচ্ছে, উপেক্ষিত হচ্ছে, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।”
যৌনকর্মীদের অধিকারের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসায় বেসরকারি উন্নয়নকর্মীদের ধন্যবাদ জানান মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।
যৌনকর্মীদের অধিকার নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “এনজিও-আইএনজিওগুলো যৌনকর্মীদের ইস্যুটি সামনে আনতে পেরেছে, এটি একটি অর্জন। এমন সময়ও গেছে যখন যৌনকর্মী শব্দটি ব্যবহার হতই না। এখানে এসে যা জানলাম, তা ভালমতো বুঝে-পড়ে কাজ করতে হবে। আমার উপর ভরসা রাখতে পারেন, আমি সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে কথা বলব, যা করা লাগে করব।”
যৌনকর্মী ও তাদের সন্তানরা সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আইনগত বিষয়ে নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন সভার বক্তারা।
তাদের ভাষ্য, আইনি ঝামেলার আশঙ্কায় স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ভয় পান যৌনকর্মীরা। তাদের কাছে পৌঁছুতে এনজিওকর্মীরাও নানা ঝামেলায় পড়েন; এ কারণে এইচআইভি প্রতিরোধ, তাদের পরিচর্যা এবং চিকিৎসা সেবায় বিঘ্ন ঘটছে।
একটি সমীক্ষার বরাত দিয়ে সভায় জানানো হয়, ভাসমান যৌনকর্মীদের ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের মারধরের শিকার হয়েছেন।
যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকটি তুলে ধরে বলা হয়, যৌনসঙ্গীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে যৌনকর্মে লিপ্ত হতে না চাওয়ার কারণে নির্যাতনের শিকার হতে হয় যৌনকর্মীদের। তারা অনেক সময় জন্মনিরোধ ব্যবস্থা নিতে পারে না। ফলে সন্তান জন্মদান এবং এইডসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে যৌনকর্মী পরিচয় দিয়ে তারা কোনো আইনি ব্যবস্থাতেও যেতে পারে না।
নাম-ঠিকানা ও পরিচয়হীন যৌনকর্মীদের সন্তানরাও পরিচয়হীন হয়। এ কারণে তারা নাগরিক হিসেবে কোনো সুবিধাই পায় না।
সভায় বলা হয়, ভাসমান যৌনকর্মীদের মৌলিক অধিকার, তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যসচেতনতা এবং রোগ প্রতিরোধে বেসরকারি অলাভজনক সংস্থার কাজেও বিঘ্ন ঘটছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের এইচআইভি/এইডস প্রোগ্রামের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক সালিমা সুলতানা এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অরডিনেটর মহুয়া লিয়া ফালিয়া দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সেভ দ্য চিলড্রেনের এইচআইভি/এইডস প্রোগ্রামের চিফ অফ পার্টি ডা. লিমা রহমান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু মোহাম্মদ ইউসুফ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের উপপরিচালক ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. বেলাল হোসেন, নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেন এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের স্বাস্থ্য পুষ্টি এবং এইচআইভি/এইডস বিভাগের পরিচালক ডা.শামিম জাহান।