বাংলাদেশ ব্যাংকের বইয়ে ‘ইতিহাস বিকৃতি’ তদন্তের নির্দেশ হাই কোর্টের

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ে ইতিহাস বিকৃতি অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2018, 11:55 AM
Updated : 2 Oct 2018, 02:36 PM

এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মো.আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেয়।

বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে এফবিসিসিআই পরিচালক কাজী এরতেজা হাসান আদালতে এই রিট আবেদন করেন।

রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন; সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী অর্পণ চক্রবর্তী ও কামরুজ্জামান কাকন। 

আলতাফ হোসেন পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত রুল জারির পাশাপাশি এ ঘটনা তদন্তে অর্থ সচিবকে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে।”

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করে ইতিহাস বিকৃতি করা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

অর্থ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, নির্বাহী ব্যবস্থাপক শুভঙ্কর সাহা ও প্রচার-প্রকাশনা বিভাগের আবুল কালাম আজাদকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের নাম থাকায় সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার মুখে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থটি গত মাসে নতুন করে সম্পাদনার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালে ২০১৩ সালে এ বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটি ও সম্পাদনা কমিটি নামে দুটি কমিটি করা হয় সে সময়।

পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করার পর ২০১৭ সালে ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয় ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’। গত ২৫ মার্চ অনুষ্ঠানিকভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন বর্তমান গভর্নর ফজলে কবির।

এরপর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দৈনিক খোলা কাগজে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইতে পাকিস্তানের ভূত- ঠাঁই পাননি বঙ্গবন্ধু, আছে স্বৈরাচার আইয়ুব খান’ এবং পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে পাকিস্তানের ভূত- দুরবিনেও মেলে না প্রধানমন্ত্রী ও আ. লীগের অবদান’ শীর্ষক দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

একই দিনে ইংরেজি দৈনিক এশিয়ান এইজেও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বইটি নতুন করে সম্পাদনা করা সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

গভর্নর বইটির বিতরণ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং পর্যালোচনার জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন বলে জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বইটি প্রকাশের আগে সম্পাদনার দায়িত্বে বেশ কয়েকবার রদবদল হয়।

সর্বশেষ এ দায়িত্বে ছিলেন ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভংকর সাহা। তার আগে দায়িত্ব পালন করেন আরেক নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মাহাফুজুর রহমান। তারা দুজনই অবসরে গেছেন।