বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষার সুপারিশ

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক কর্মশালায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2018, 07:06 PM
Updated : 12 Sept 2018, 07:06 PM

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি সংক্রান্ত অভিন্ন নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে আয়োজিত এই কর্মশালায় অংশ নেওয়া ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের প্রায় সবাই লিখিত পরীক্ষার বিষয়ে একমত পোষণ করেন।

বুধবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ভবনে এই কর্মশালায় নীতিমালা খসড়ার সমালোচনা ও সংশোধন দুই-ই উঠে এসেছে উপাচার্যদের কথায়। অভিন্ন নীতিমালার বিরোধিতাও করেছেন কেউ কেউ।

প্রস্তাবিত নীতিমালায় রয়েছে, প্রভাষক পদে যোগ দিতে হলে অনার্স-মাস্টার্স দুটোতেই প্রথম শ্রেণি বা সিজিপিএ ন্যূনতম ৩ দশমিক ৫ থাকতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবাহান এ প্রসঙ্গে বলেন, “ভালো রেজাল্ট মানেই ভালো শিক্ষক নয়। কথা বলতে পারা, গবেষণা করার মানসিকতা থাকাসহ আরও যোগ্যতা থাকা জরুরি।”

তিনি অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে এসএসসি এইচএসসির ফলাফল বিবেচনা না করে সম্মান ও স্নাতক পর্যায়ের ফলাফল ও যোগ্যতা মূল্যায়নের পরামর্শ দেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সাথে বিজ্ঞান অনুষদে শিক্ষক নিয়োগে ফলাফলের মানদণ্ডে পার্থক্য রাখার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, "বিজ্ঞান অনুষদে যদি রিকোয়ারমেন্ট ৩ দশমিক ৫ হয়, তবে কলা আর সমাজ বিজ্ঞান অনুষদে আরও কম হওয়া উচিত। নয়ত বিজ্ঞান অনুষদের রিকোয়ারমেন্ট বাড়িয়ে দেওয়া হোক।"

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর রশীদ বলেন, "শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত। শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে হলে সঠিক উপায়ে শিক্ষক বাছাই করতেই হবে।”

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নানও বলেন, “নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষক নির্বাচন করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে প্রার্থীকে ক্লাস নেওয়ার দক্ষতার বিষয়েও পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।”

তাদের সঙ্গে অন্য উপাচার্যরাও প্রভাষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মত দেন।

পাঠ্যবই রচনা করেন এমন শিক্ষক ও গবেষণা কাজে নিয়মিত নিয়োজিত থাকেন, পদন্নোতির ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে মত দেন অধ্যপক মান্নান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতিতে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। অভিন্ন নীতিমালার খসড়ায় পদোন্নতি নিয়ে বলা হয়েছে, সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে ন্যূনতম ১০ বছরসহ মোট ২২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

এমফিল প্রার্থীর ক্ষেত্রে সাত বছরসহ মোট ১৭ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় থাকতে হবে। পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্তদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসহ ন্যূনতম ১২ বছর সক্রিয় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। 

সহকারী থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে একজন শিক্ষককে কমপক্ষে সাত বছর ক্লাসরুম শিক্ষকতাসহ ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

গবেষণাসহ এমফিল প্রার্থীর ক্ষেত্রে ন্যূনতম ছয় বছরসহ নয় বছর সক্রিয় শিক্ষকতায় থাকতে হবে। পিএইডি ডিগ্রিধারীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম চার বছরসহ মোট সাত বছর শিক্ষকতা করতে হবে।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরর উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, “অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ১০ বছরের চাকরি জীবনে অধ্যাপক হয়ে গেছেন, অনেকে আবার একটি প্রকাশনা দিয়ে বারবার পদোন্নতি পেয়েছেন। তাই শিক্ষকদের কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হলে দ্রুত অভিন্ন নীতিমালা বাস্তবায়ন করা উচিত।”

কোনো কোনো উপাচার্য মনে করছেন, অভিন্ন নীতিমালা উচ্চশিক্ষাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলবে। একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত পড়াশুনা করে শিক্ষকরা আর পড়তে চাইবেন না এবং অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমাবেন। এছাড়াও জেলা পর্যায়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে জটিলতা তৈরি হবে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইমামুল হক বলেন, “নীতিমালায় অনেক সংশোধন জরুরী। এগুলো সঠিক করে প্রজ্ঞাপন জারি করলে ভালো হয়।”

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা যাতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ডিগ্রী আর গবেষণা নিয়েই নিজেদের উপস্থাপন করতে পারে সেজন্য অভিন্ন নীতিমালা অবশ্যই জরুরি। অনিয়ম, জটিলতা, অভিযোগ কমানোর এটিই উপায়।”

সবশেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, “আজ কর্মশালা আয়োজন করায় উপাচার্যদের বক্তব্য, সুপারিশ শোনার সুযোগ হল। সবার কথা মাথায় রেখে, বক্তব্য বিবেচনা করে তবেই অভিন্ন নীতিমালা চূড়ান্ত করবে সরকার।”