সড়ক আইনের খসড়া সংশোধনের দাবি রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের

সরকার সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া করার সময় ‘মালিকদের স্বার্থকে’ প্রাধান্য দেওয়ায় নিরাপত্তার বিষয়গুলো ‘গুরুত্ব পায়নি’ বলে অভিযোগ করেছে রোড সেইফটি ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2018, 11:52 AM
Updated : 11 August 2018, 11:52 AM

শনিবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া ‘ন্যায্যতার’ ভিত্তিতে সংশোধন এবং যুগপোযোগী করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই সংবাদ সম্মেলন থেকে রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের ১৬ দফা দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ শরীফ।

তিনি বলেন, “এ আইনে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়গুলো তেমন গুরুত্ব পায়নি। মোট কথা পরিবহন মালিক, শ্রমিক এবং যাত্রী- তথা জনসাধারণ- সকল পক্ষের স্বার্থ সুরক্ষা হয়নি। মূলত মালিক পক্ষের স্বার্থকেই আইনে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।”

সড়ক পরিবহন আইনে চালকদের সাজার পরিমাণ বৃদ্ধি করা যেমন জরুরি, তেমনি চালকদের নিয়োগ নীতিমালাসহ পেশাগত সুযোগ-সুবিধা, আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন আব্দুল হামিদ শরীফ।

তিনি বলেন, “নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকার গত ৬ অগাস্ট মন্ত্রিসভায় সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর যে খসড়া অনুমোদন করেছে, সেখানে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের অন্যায্য হস্তক্ষেপ স্পষ্ট।”

আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে আইন মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় এ সংবাদ সম্মেলন থেকে।

শরীফ বলেন, চালকের সাজার মেয়াদ ৩ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫ বছর এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হলেও চালকের কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা হয়নি।

“কিন্তু অন্যান্য পেশার শ্রমিকদের চাইতেও পরিবহন চালকদের শ্রমঘণ্টা বা কর্মঘণ্টা নির্ধারণ অনেক বেশি জুরুরি। কারণ এ পেশাটি অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ; যার সাথে মানুষের জীবন-মরণ ও হতাহতের বিষয়গুলো জড়িত।

অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে চালকের জন্য যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, মালিকের জন্যও তা প্রযোজ্য হওয়া উচিৎ বলে মত দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন রাখা হয়- সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ‘হত্যাকাণ্ড’ প্রমাণিত হলে ফৌজদারি আইনে বিচার করে চালকের মৃত্যুদণ্ডের সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনাটি নিছক ‘দুর্ঘটনা’ না ‘হত্যাকাণ্ড’ তা তদন্ত করবে কে?

দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহন শ্রমিকের বীমা বা ক্ষতিপূরণের বিষয়ে অনুমোদিত খসড়ায় কিছু বলা হয়নি উল্লেখ করে শরীফ তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, “মূলত তৃতীয় পক্ষীয় বীমার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ বিশ্বব্যাপী তৃতীয় পক্ষীয় বীমা যানবাহনে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।”

দেশের পরিবহন শ্রমকিরা ‘অধিকার সচেতন নন’ মন্তব্য করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “তারা নিয়োগপত্র, বেতন কাঠামো, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, বিশ্রামাগার, সমগতিভিত্তিক সড়ক লেন বা বিভাজক তৈরি- এসব দাবিতে ঐক্যবদ্ধ না হয়ে শুধু জেল-জরিমানার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। শ্রমিক নেতারা নিজেদের স্বার্থে এসব বিষয়ে শ্রমকিদের সচেতন করেন না। ফলে সড়ক পরিবহনে নৈরাজ্য বাড়ছেই।”

গণপরিবহনে অব্যবস্থাপনার জন্য মূলত ‘রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারকে’ দায়ী করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

শরীফ বলেন, পরিবহন মালিক সমিতি ও পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে সবসময়ই ক্ষমতাসীন দলের নেতারা থাকেন। গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলার উদ্যোগ নিলেই তারা একজোট হয়ে প্রভাব খাটিয়ে তা বন্ধ করে দেন। কোনো কোনো সময় তারা জনসাধারণকেও জিম্মি করে ফেলেন।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিআরটিএ দেশে গণপরিবহন ব্যবস্থায় নৈরাজ্যের দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সারা দেশে বিআরটিএ এর ৮২৩টি পদের জনবল কাঠামো থাকলেও লোকবলের সংখ্যা সাড়ে পাঁচশোর মত জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে ২০ ধরনের ৩৬ লাখ যানবাহন আছে। ফলে বিআরটিএ এর একজন কর্মীর ওপর ৫ হাজারের বেশি গাড়ির তদারকি করার দায়িত্ব থাকছে। 

“মোট কথা এই লোকবল দিয়ে সারা দেশের যানবাহনের সুষ্ঠু তদারকি তো দূরে থাক, গাড়ির সংখ্যা গণনা করাও কঠিন।”

রাজধানীর যানজট নিরসনে প্রাইভেট কার ও রিকশার জন্য আলাদা লেইন, বিকল্প এবং সাশ্রয়ী পরিবহন হিসেবে রেল ও নৌযানের পরিসর বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয় রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে।

পাশাপাশি বিআরটিএ এর চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা যুগ্ম সচিব থেকে সচিব পর্যায়ে উন্নীত করারও আহ্বান জানানো হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যেতির্ময় বড়ুয়ার সঞ্চলানায় ‘গণপরিবহনের অব্যবস্থাপনা ও সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পর্যালোচনা’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, অর্থনীতিবিদ এম এস সিদ্দিক, বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের শিক্ষক শাহনেওয়াজ হাসানাত ই-রাব্বি বক্তব্য দেন।