৫৭ ধারার মামলায় শহিদুল রিমান্ডে

আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2018, 01:07 PM
Updated : 6 August 2018, 04:35 PM

রমনা থানায় দায়ের করা এই মামলায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ‘ভীতি ও সন্ত্রাস’ ছড়াতে ইন্টারনেটে ‘কল্পনাপ্রসূত উসকানিমূলক মিথ্যা’ তথ্য প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুলের বিরুদ্ধে। 

তাকে রোববার রাতে আটকের পর সোমবার বিকালে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন গোয়েন্দা পরিদর্শক আরমান আলী।

এ বিষয়ে শুনানি করে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে শহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কড়া নিরাপত্তা ও পুলিশি পাহারার মধ্যে খালি পায়ে শহিদুলকে এজলাসে আনা হয়।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস, জীবাননন্দ চন্দ্র জয়ন্তসহ ১০-১২জন আইনজীবী শহিদুলের পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানিতে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল অধিকার আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত শনি ও রোববার জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফেইসবুক লাইভে আসেন তিনি।

শহীদুল আলম (ফাইল ছবি)

ওই আন্দোলনের বিষয়ে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারের সমালোচনাও করেন।

এরপর রোববার রাতে শহিদুল আলমকে তার ধানমণ্ডির বাসা থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয় বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়।

সোমবার সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য’ তারা ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গেছেন।

শহিদুলকে কেন আটক করা হয়েছে সে বিষয়ে পুলিশ শুরুতে স্পষ্ট কিছু না বললেও বিকালে মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় তিনিই একমাত্র আসামি।

তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা এ মামলায় ‘কল্পনাপ্রসূত তথ্যের’ মাধ্যমে জনসাধারণের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে ‘মিথ্যা প্রচার’ চালানো, উসকানিমূলক তথ্য উপস্থাপন, সরকারকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকর’ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতি ঘটিয়ে’ জনমনে ‘ভীতি ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে’ দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং তা বাস্তবায়নে ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ‘অপপ্রচারের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে শহিদুল বলেছেন, গ্রেপ্তারের সময় চোখ-মুখ বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে তাকে গাড়িতে তোলা হয়েছিল।

তিনি বলেন, “তারা আমাকে মোসাদ, আইএসআইর এজেন্ট বলে গালি দেয়, দেশদ্রোহীও বলে তারা। তারা আমাকে মারধরও করে।”

শুনানিতে শহিদুলের পক্ষে ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “তার মুখে আঘাত করা হয়। তার পাঞ্জাবিতে রক্ত লাগে। এখনও তার পোশাক ভেজা।”

আইনজীবীরা বলেন, হাই কোর্ট ৫৪ ধারার গ্রেপ্তার-রিমান্ডের বিষয়ে যে ১২টি নির্দেশনা দিয়েছিল, তার কোনোটিই শহিদুলের ক্ষেত্রে মানা হয়নি।

শহিদুলের আইনজীবীদের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মাহমুদুর রহমান এবং তদন্ত ককর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আরমান আলী।

প্রায় ৪০ মিনিট শুনানি নিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় বিচারক আসাদুজ্জামান নূর সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়ে এজলাস ছাড়েন।

এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ‘নিপীড়ন’ বন্ধেরও দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি।

 আল জাজিরা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেওয়ার কারণেই শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মন্তব্য করে অ্যামনেস্টির সাউথ এশিয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ওমর ওয়ারেইস ওই বিবৃতিতে বলেন, “শহিদুল আলমকে দ্রুততম সময়ে এবং নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে হবে। কেউ শান্তিপূর্ণ উপায়ে মতামত প্রকাশ করলে তাকে আটকের কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। তার এই গ্রেপ্তার শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের হামলার ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ করছে।”