ধানমণ্ডিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে ঢাকার ধানমণ্ডিতে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2018, 08:06 AM
Updated : 5 August 2018, 02:53 PM

রোববার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত দফায় দফায় এই সংঘর্ষ চলার মধ্যে হেলমেট পরা একদল যুবক লাঠি ও কিরিচ নিয়ে হামলা চালায় কর্তব্যরত সাংবাদিকদের উপর।

সংঘর্ষ ও হামলায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে; তাদের পাশে পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে দেখা গেছে।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সপ্তম দিন শনিবার জিগাতলায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধেছিল ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে থাকা কর্মীদের।

ওই শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে রোববার দুপুরে শাহবাগে জড়ো হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার ছাত্র মিছিল নিয়ে রওনা হয় জিগাতলার দিকে।

মিছিলটি ধানমণ্ডি দুই নম্বর সড়কে পুলিশের বাধা পায়, তারপরই বেঁধে যায় সংঘর্ষ।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনত শিক্ষার্থীরা রোববার শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে ধানমণ্ডির দিকে যায় ।

মিছিলকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আগের দিন হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানাতে যাচ্ছিলেন তারা। পুলিশ তাদের বাধা দেয়।

তবে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেন, এই শিক্ষার্থীদের শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়নি।

“কিন্তু তারা ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে এগোতে চাইলে তাদের বারণ করা হয়েছিল; কিন্তু তারা শোনেনি, এজন্য কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে।”

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ধানমণ্ডি দুই নম্বর সড়কে পুলিশ শিক্ষার্থীদের আটকে দেওয়ার পরপরই  শুরু হয় সংঘর্ষ; এসময় পুলিশ মুহুর্মুহু কাঁদুনে গ্যাস ছুড়তে থাকে, তাদের সাঁজোয়া যানগুলোও ছিল সচল। 

কাঁদুনে গ্যাসের জবাবে শিক্ষার্থীরাও ইট ছুড়তে থাকে। ঘণ্টা দুয়েক ধরে উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে দুই নম্বর সড়কে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ এক নম্বর সড়কেও ছড়িয়ে পড়ে।

এরই মধ্যে মধ্যে দুপুর দেড়টার দিকে কর্তব্যরত সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয় হেলমেট পরা একদল যুবক। তাদের হাতে ছিল কিরিচ, লাঠি, রড।

রোববার ধানমণ্ডি এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময় এক আলোকচিত্রীকে মারধর করে একদল যুবক।

এপির আলোকচিত্র সাংবাদিক এ এম আহাদকে বেধড়ক মারধর করে তারা, ভাংচুর হয় তার ক্যামেরা। তাদের হামলায় আহত হয় আরও কয়েকজন সাংবাদিক। ভাংচুর করা হয় নাগরিক টেলিভিশনের গাড়িও।

হেলমেট পরা ওই যুবকদের হামলায় শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকজন আহত হয়। সব মিলিয়ে অর্ধশত আহত হন সেখানে। রক্তাক্ত অবস্থায় বিভিন্ন জনকে নানা দিকে ছুটতে দেখা যায়।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে সড়কে থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রোববার ধানমণ্ডিতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আহত একজন।

হেলমেটধারী যুবকরা পুলিশের সামনে মহড়া দিলেও তাদের আটকানো হয়নি।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশ কর্মকর্তা মারুফ সাংবাদিকদের বলেন, “আমি কোনো অস্ত্র দেখিনি। আর কোনো সাংবাদিক আমার কাছে কমপ্লেইন করেনি।”

শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ছোড়া হলেও এই যুবকদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ ছিল না কেন- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এখানে ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে চলে গেছে, কারা কোন দিকে, এখানে আমরাও বিভ্রান্ত হয়ে গেছি ….  যারা আমাদের দিকে ঢিল মেরেছে, শুধু তাদেরকেই ছত্রভঙ্গ করেছি।”

শিক্ষার্থীদের এক সপ্তাহের আন্দোলনের মধ্যে নাশকতাকারীরা ঢুকেছে দাবি করে রোববার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও সড়কে অবস্থান নিয়েছিল।

সকালে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় একদল যুবককে মোটর সাইকেল নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গিয়েছিল।  তখন পরিস্থিতি ছিল শান্ত, শিক্ষার্থীদের অবস্থানও ছিল না সেখানে।

বিকালে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা শান্ত হয়ে এলে ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী পরীবাগ থেকে শাহবাগের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে। ওই শিক্ষার্থীরা তখন ব্যাংক এশিয়ার পাশের গলিতে ঢুকে পড়ে।

বিকালে শাহবাগ মোড়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় মহড়া দিতে দেখা গেছে।

রামপুরায় ‍উত্তেজনা

রামপুরায় বেলা পৌনে ১টার দিকে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান নেয় একদল যুবক। মেরুল বাড্ডা থেকে রামপুরা ব্রিজের দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে এগোতে থাকে তারা।

রামপুরা ব্রিজের কাছে তখন ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইমপেরিয়াল কলেজ, খিলগাঁও ওমেন্স স্কুল ও কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান করছিল।

ওই যুবকদের দেখে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনের গাছ ও দোকান ভেঙে লাঠি ও বাঁশ নিয়ে শিক্ষার্থীরাও অবস্থান নেয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রামপুরা সেতুর উপর পুলিশ অবস্থান নেয়।

রামপুরা থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষার্থীদের একজন আহত হয়েছে এমন গুজবে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। গতকাল চারজন নিহত হওয়ার গুজবের কথাও বলছে তারা। আমরা তাদের লাঠিসোঁটা ফেলে রাস্তার এক প্রান্তে অবস্থান নিতে বলেছি।” 

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “কেউ মারা যায়নি, যদি কেউ নিহত হয়ে থাকে, তাহলে আমি নিজের পোশাক খুলে তোমাদের সাথে অবস্থান নেব।”

রামপুরায় ইউনিফর্ম ও আইডি কার্ড ছাড়া কিছু তরুণকে এ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন গাড়ি ঘুরিয়ে দিতে দেখা গেছে। তারা রিকশা থেকেও যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছিল।

বেলা আড়াইটার দিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী রামপুরায় গিয়ে সেখানকার শিক্ষার্থীদের সাথে অবস্থান নেয়।

সেখানে আইডি কার্ড ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীকে থাকতে দেওয়া হচ্ছিল না।

দুইজন শিক্ষার্থীর কাছে ‘ভুয়া আইডি’ পাওয়া গেলে তাদের আটক করে পুলিশ। তাদের আইডিতে লেখা ছিল ‘ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজ’। কিন্তু তারা দাবি করছিল, তারা বিএম কলেজের শিক্ষার্থী। কিছুক্ষণ আটকে রাখার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিকাল ৫টার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়লে রামপুরায় যান চলাচল স্বাভাবিক হতে দেখা যায়।

রামপুরায় আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা জানান, নয় দফা দাবির পাশাপাশি তারা নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ চান।

এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা কোনো গুজবে কান দিচ্ছি না। কিন্তু যাদের ওপর হামলা হল, সেই হামলার বিচার চাই। কোন প্রক্রিয়ায় আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হচ্ছে, সে প্রক্রিয়াটি আমাদের কাছে স্বচ্ছ করে দেওয়া হলে আমরা রাস্তা ছেড়ে দেব।”