ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদতাজওয়া আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা এখন বুয়েট, পেট্রোবাংলা, প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের কাছে সাহায়তা চেয়ে চিঠি দেব। তাদের মতামত আর সহায়তা নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
মিরপুর থানায় করা এক সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে আধাপাকা ওই বাড়িতে শনিবার একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে গুপ্তধনের সন্ধানে খোঁড়াখুড়ি শুরু হয়।
প্রথম দিন ২০ জন শ্রমিক টানা ছয় ঘণ্টা কাজ করে দুটি কক্ষের প্রায় চার ফুট মাটি খুঁড়ে তোলেন। এরপরেও কিছু না পেয়ে দিনের মত খোঁড়াখুঁড়ি স্থগিত করেন ঢাকা জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুজ্জামান।
রোববার সকালে মাটি খোঁড়ার কাজ আবার শুরু করার কথা ছিল। শ্রমিকরা কোদাল শাবল নিয়ে প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলীরা এসে ওই বাড়ি ঘুরে দেখার পর মত বদলান ম্যাজিস্ট্রেট।
তাজওয়া আকরাম দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রকৌশলী খোঁড়ার মতামত দিলে আমরা আজ কাজ শুরু করতাম। কিন্তু ভবনের ঝুঁকি এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তা করতে নিষেধ করেছেন প্রকৌশলী। এখন বিশেষজ্ঞের মতামত ছাড়া সেখানে কোনো কাজ করা যাবে না।”
তাহলে খনন শুরুর আগে কেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হল না এ প্রশ্নে তিনি বলেন, গুপ্তধন নিয়ে গুঞ্জনে এলাকাবাসীর মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে এক ধরনের উৎকণ্ঠা ছিল। এ কারণে পুলিশের সহায়তা নিয়েমতারা ‘প্রাথমিক কাজ’ শুরু করেন।
কিন্তু এখন আরও মাটি খুঁড়তে গেলে বাড়ির কাঠামো ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। এ কারণে বিশেষজ্ঞ পারামর্শ না নিয়ে আর এগোনো ঠিক হবে না বলে মনে করছেন ম্যাজিস্ট্রেট।
মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ১৬ নম্বর সড়কের ১৬ নম্বর হোল্ডিংয়ে পৌনে দুই কাঠা জমির ওপর ওই বাড়ির মালিক মনিরুল আলম এক ব্যক্তি, যিনি একটি এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানিতে চাকরি করেন। আট বছর আগে ওই টিনশেড বাড়ি কিনে সাতটি ঘর ভাড়া দিয়ে আসছিলেন তিনি। বাড়ির দেখাশোনা আর ভাড়া তোলার কাজটি করতেন একজন ‘কেয়ারটেকার’।
ওই জমিতে নতুন করে ভবন নির্মাণের জন্য সম্প্রতি ভাড়াটিয়াদের বিদায় করে দেন মনিরুল। তারপর থেকে বাড়িটি ফাঁকাই পড়ে ছিল।
গত ১৪ জুলাই মনিরুল মিরপুর থানায় একটি জিডি করেন। সেখানে তিনি বলেন, তার বাড়ির নিচে গুপ্তধন রয়েছে বলে গুঞ্জন থাকায় লোকজন ভিড় করছে এবং নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় সরকার ওই জমিতে খনন চালালে তার আপত্তি নেই।
মনিরুল শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, গত ১২ জুলাই রাতে আবু তৈয়ব নামের এক ব্যক্তিসহ দুইজন বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করলে কেয়ারটেকার তাদের বাধা দেন। তখন তারা তাকে আর্থিক প্রলোভন দেখায়। বলে, ওখানে গুপ্তধন আছে। তাদের গোপনে সুযোগ করে দিলে তার ভাগও তাকে দেওয়া হবে।
কেয়ারটেকারের কাছ থেকে খবর পেয়ে মনিরুল মিরপুর থানায় যান। পুলিশের পরামর্শে পরে জিডি করেন তিনি। কিন্তু তার আগেই কক্সবাজারের টেকনাফের যুবলীগ নেতা তৈয়ব থানায় একটি জিডি করেন।
তৈয়বের জিডিতে বলা হয়, এক সময় ওই বাড়ির মালিক ছিলেন তার বন্ধু সৈয়দ আলমের আত্মীয় দিলশাদ খান। মুক্তিযুদ্ধের সময় দিলশাদরা বাড়ি বিক্রি করে চলে যান। যাওয়ার সময় দুই মণ সোনা মাটির নিচে পুঁতে রেখে যান।
ওই এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার জহিরুল ইসলাম মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল। এরশাদ সরকারের আমলে জমিটি কেনার সুযোগ দেওয়া হলে স্থানীয় একজন কিনে নেন। পরে কয়েক দফা হাতবদল হয়ে বাড়িটি বর্তমান মালিক মনিরুলের কাছে আসে।
দুই পক্ষের জিডি পেয়ে প্রশাসন ওই বাড়িতে খননের সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর আদালতের অনুমতি নিয়ে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে শনিবার ওই বাড়িতে পাঠানো হয়।
বাড়ির বর্তমান মালিক মনিরুল আলমের মামা পাকিজা গ্রুপের জিএম সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাটি খোঁড়ার বিষয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে তারা প্রস্তুত।
“মাটি খোঁড়ার টাকা আমরাই দেব, সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে বলে দিয়েছি আমরা। তাছাড়া যেভাবে তারা আমাদের সহযোগিতা চাইবে তা আমরা করব।”
ওসি দাদন ফকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, টেকনাফ যুবলীগের সহসভাপতি তৈয়বের কাছ থেকেই প্রথম তিনি ওই বাড়িতে গুপ্তধন থাকার গুঞ্জনের বিষয়টি জানতে পারেন। তৈয়ব এখন আছেন তার টেকনাফের বাড়িতে।
“শনিবার তাকে ফোন করে ঢাকায় আসতে বলা হয়েছিল, কিন্তু আসেননি। রোববার সকালেও আসার জন্য ফোন করা হয়েছিল। আসছি আসছি বলেও তিনি আসছেন না।
এ বিষয়ে কথা বলতে তৈয়ব আলীকে ফোন করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যে বন্ধুর মাধ্যমে তিনি গুপ্তধনের খবর পেয়েছিলেন, সেই সৈয়দ আলমের খোঁজ তিনি পাচ্ছেন না। সৈয়দ আলমকে নিয়েই তিনি ঢাকায় আসবেন।