পাহাড় ধস নতুন আশঙ্কার নাম: মায়া

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, পাহাড় ধস বাংলাদেশে এক নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2018, 09:48 AM
Updated : 13 July 2018, 09:48 AM

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বৃহস্পতিবার এক সেমিনারে মায়া বলেন, “পাহাড়ের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে মৃত্যুর শঙ্কা। এটা নতুন দুর্যোগ, নতুন বিপর্যয়। কিছুটা প্রাকৃতিক এবং কিছুটা মনুষ্যসৃষ্ট।”

মন্ত্রী তথ্য দেন, কেবল ২০১৭ সালেই বাংলাদেশে পাহাড় ধসে ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাঙামাটি জেলায় মারা গেছে ১২০ জন মানুষ। ৩৭৫০টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৩৬ হাজার ৬৩৭টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আর এ বছর জুন পর্যন্ত সময়ে পাহাড় ধসে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী।

পাহাড় ধস রোধে ‘যে কোনো মূল্যে’ ভূমির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে মায়া বলেন, পাহাড় ধস রোধে গঠিত ২৭ সদস্যের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

“আমি মনে করি যে কোনোভাবে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। এটা করলে পাহাড় ধস এবং অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রোধ করা যাবে।”

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার খান। তিনি বলেন, অবাধে পাহাড় কাটা, বন উজাড়, যেখানে সেখানে বসতি স্থাপনের কারণে পাহাড় ক্ষয় হচ্ছে। এক পর্যায়ে ধসের ঘটনা ঘটছে। ধস রোধে সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে।

“মূল মাটির অনেক গভীরে যায় এমন গাছ রোপন, পাহাড়ের কাটা অংশে জিও টেক্সটাইল ব্যবহার এবং পাহাড়ে রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য স্থাপনা তৈরির সময় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। সবার আগে পাহাড়ে জরিপ করতে হবে। সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই বিভিন্ন নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে।”

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সভাপতি মো. আবদুস সবুর সেমিনারে বলেন, ভূমিধসের কারণে প্রতিবছরই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১০ সারাদেশে ১৭ হাজার মানুষ যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, ২০১৭ সালে এসে তা ৪২ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

পাহাড়ধস বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও তা সেভাবে আলোচনায় আসছে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের চেয়ারম্যান রেশাদ মো. ইকরাম আলী।

তিনি বলেন, “প্রতি বছরই পাহাড় ধসে অনেক প্রাণ এবং সম্পদহানী হয়।…  কিন্তু সে হিসাবে আমরা বিষয়টির প্রতি এখনো গুরুত্ব দিচ্ছি না। এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার সময় এসেছে।”

চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সুদীপ কুমার পাল বলেন, ‘বাস্তব কারণেই’ পাহাড়ে বসতি স্থাপন ঠেকানো যাবে না। কিন্তু বসতি স্থাপন করতে হলে তা পরিকল্পনামাফিক করা উচিত।

“পাহাড়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় অনেক জায়গায় ধস নামে। এজন্য ভবন বানানো হলে সেটার নিষ্কাশন ব্যবস্থা আধুনিক হতে হবে। বিল্ডিং কোড মেনে পরিকল্পনামাফিক যেন ভবন তৈরি হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”

আইইবির পুরকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সেমিনারে আইইবির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মনজুর মোর্শেদও বক্তব্য দেন।