এদিন সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেনেই ছিল ভিড়। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের প্রতিটি ট্রেন ছিল যাত্রীতে ঠাসা।
আসন ছাড়াও ট্রেনের ভেতরে দাঁড়িয়ে, পাদানিতে ঝুলে, ইঞ্জিনের সামনে পেছনে আর ছাদে চড়ে বাড়ির পথ ধরেছেন ঘরমুখো মানুষ।
ঈদের দুদিন আগে বৃহস্পতিবার পাঁচটি বিশেষ ট্রেনসহ মোট ৬৯টি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশন ছেড়েছে ২৩টি ট্রেন।
এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলগামী কয়েকটি ট্রেনের যাত্রায় দেরি বিষাদ ছড়িয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। গরমের মধ্যে শিশুদের ভোগান্তি ছিল বেশি।
চিলাহাটির নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল সকাল ৮টায়। যাত্রীদের অনেকে ভোর থেকেই স্টেশনে এসে ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন।
রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালসের কর্মকর্তা ওমর ফারুক স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অপেক্ষা করতে করতে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “আমরা ট্রেনে করে সৈয়দপুর পর্যন্ত যাব। সেখান থেকে যেতে হবে বীরগঞ্জে। সকাল ৮টায় ট্রেন ছাড়লে সেটা বিকাল ৫টার দিকে সৈয়দপুর পৌঁছে। কিন্তু আজ তো মনে হচ্ছে রাত ৯টার মতো বেজে যাবে। রাতে যানবাহন পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে।
ওই ট্রেনের আরেক যাত্রী সাদেকুর রহমান শুভও বিরক্ত কণ্ঠে বলেন, এই ট্রেনের টিকেট কিনেই ‘ভুল’ করেছেন।
“আমি সাধারণত রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে যাই। কিন্তু রংপুর এক্সপ্রেস দেরি করে বলে এবার নীলসাগরের টিকেট কিনেছিলাম। কিন্তু এই ট্রেন তো দেখি আরও বেশি দেরি করল।”
বেলা পৌনে ১১টায় ট্রেনটি কমলাপুর আসে। তখনও সেটি যাত্রীতে পূর্ণ। বিমানবন্দর স্টেশন থেকেই অনেক যাত্রী ট্রেনে উঠে বসে আছেন। ট্রেনে উঠতে গিয়ে যাত্রীদের বেশ বেগ পেতে হয়। ১১টা ২০ মিনিটে ট্রেনটি প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যায়।
লালমনিরহাট ঈদ স্পেশাল ট্রেনের ছেড়ে যাওয়ার সময় বেলা সোয়া ৯টায়। কিন্তু বেলা সাড়ে ১১টায়ও ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে আসেনি। ওই ট্রেনের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় ছিলেন যাত্রীরা।
রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন ৫৫ মিনিট দেরি করে ছেড়েছে। এছাড়া কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ২০ মিনিট পর ছেড়েছে।
খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলে তা ছেড়েছে ৭টা ২৫ মিনিটে।
সকাল ৯টায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলে সেটি দেড় ঘণ্টা দেরি করে বেলা সাড়ে ১০টায় স্টেশন ছেড়ে যায়।
দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেন আধাঘণ্টা দেরি করেছে। ট্রেনটি বেলা দশটার পরিবর্তে সাড়ে ১০টায় ছেড়ে যায়।
“ঈদের এমন একটু কষ্ট তো হবেই। তারপরও বাড়ি যেতে পারছি এতেই খুব ভালো লাগছে।”
আরেক যাত্রী ঈদে বাড়ি ফিরতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের আরেক যাত্রী কামরুল হাসান।
“আমি তো নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি, টিকেট কেটে ভেতরে বসতে পেরেছি, অনেকে তো ভেতরে জায়গাই পায়নি। অনেকে ট্রেনের ছাড়ে চড়েও যাচ্ছে।”
যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় ট্রেন দেরি করছে বলে জানান কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্ত্তী। তিনি বলেন, পাঁচটি ট্রেন ছাড়া বাকিগুলো সময়মতো ছেড়ে গেছে।
“ধূমকেতু, সুন্দরবন ট্রেন দুটি দেরি করে স্টেশনে এসেছে। এজন্য এগুলো ছাড়তেও দেরি হয়েছে। যাত্রীদের চাপে একটি কোচে সমস্যা দিয়েছে, ফলে এটি পরিবর্তন করতে হয়েছে, এ কারণে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দেরি করেছে।”
তাছাড়া যাত্রীদের ওঠা-নামায় সময় বেশি লাগায় তার প্রভাবেও ট্রেনের দেরি হচ্ছে বলে জানান তিনি।