গাজীপুরে ভোট স্থগিত: অপ্রস্তুত ছিল ইসি

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আয়োজনে জোর প্রস্তুতির মধ্যে যে সীমানা নিয়ে আপত্তিতে একটি রিট আবেদন হচ্ছে, তা আগে আঁচ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন; শুনানির জন্য নিয়োগ করতে পারেনি আইনজীবীও।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2018, 02:32 PM
Updated : 7 May 2018, 03:51 PM

ভোটের নয় দিন আগে গাজীপুরে নির্বাচন স্থগিতে আদালতের আদেশের পর তা নিয়ে আলোচনার মধ্যে সোমবার নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের কথায় ইসির অপ্রস্তুত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তবে তিনি দাবি করেছেন, ইসির কোনো গাফিলতি ছিল না।

আগামী ১৫ মে ভোটের দিন রেখে গত ৩১ মার্চ গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। তারপর ভোটের সব প্রস্তুতিও সারা হয়েছিল; প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের সঙ্গে প্রচারও জমে উঠেছিল।

এর মধ্যেই রোববার হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন নিয়ে যান ঢাকার সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ। শিমুলিয়ার ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজের ওই আবেদনে হাই কোর্ট ঢাকার লাগোয়া এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে দেয়। আদেশের খবর পেয়ে ইসিও গাজীপুরে ভোটের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, এই নির্বাচন স্থগিতে সরকারের হাত রয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করে বলছেন, এটা পুরোপুরি আদালতের বিষয়।

এরপর সোমবার হাই কোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমও আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন।

নির্বাচন ভবন

এর মধ্যে সোমবার বিকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমকে পেয়ে তাকে ছেঁকে ধরেন সাংবাদিকরা।

তিনি বলেন, “দায় কার এটা বলার সুযোগ আমার নেই। তবে আমি বলতে পারি, কমিশনের কোনো গাফিলতি নেই।”

এই নির্বাচন কমিশনার জানান, গাজীপুর সিটি নির্বাচনের বিষয়ে স্থানীয় সরকার থেকে দুই বার ‘ক্লিয়ারেন্স’ নেওয়া হয়েছে।

“সরকার জানিয়েছে, সেখানে কোনো ধরনের জটিলতা নেই; তারা কমিশনকে নির্বাচন করতে বলেছে। আমরা স্থানীয় সরকার থেকে ক্লিয়ারেন্স নেওয়ার পরই নির্বচনের তফসিল ঘোষণা করি। এখন কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতের কাছে যেতে পারে। আইন তাকে সে সুযোগ দিয়েছে।”

গাজীপুর সিটি করপোরেশন

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৩ সালে ১৬ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের গেজেট, চলতি বছরের ৪ মার্চ স্থানীয় সরকার বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপন ও নির্বাচনের জন্য গত ৩১ মার্চ ঘোষিত তফসিল চ্যালেঞ্জ করেন ইউপি চেয়ারম্যান আজহারুল।

সংবিধানের ১২৫ অনুচ্ছেদে (গ) বলা হয়েছে-  কোনো আদালত, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে এরূপ কোনো নির্বাচনের বিষয়ে, নির্বাচন কমিশনকে যুক্তিসংগত নোটিস ও শুনানির সুযোগ প্রদান না করিয়া, অন্তর্বর্তী বা অন্য কোনোরূপে কোনো আদেশ বা নির্দেশ প্রদান করিবেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানম বলেন, “আমরা এ রিট বিষয়ে হিয়ারিংয়ের আগে জানতাম না; হিয়ারিং হওয়ার পর জেনেছি।”

নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম

“আমরা কোনো আইনজীবীও ওখানে নিয়োগ দিইনি। আমাদের প্যানেলভুক্ত একজন আইজীবী রিটের একটা কপি পেয়ে হিয়ারিংয়ে ছিলেন। কিন্তু তাকে ওকালতনামা দেওয়ার মতো সুযোগও ছিল না আমাদের।”

রোববার আদালতে রিট আবেদনের শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন তৌহিদুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।

গাজীপুরে ভোট স্থগিত রেখে আদালতের আদেশ হওয়ার সময় সিইসি কে এম নূরুল হুদা ছিলেন খুলনায়।

আদালতের নির্দেশনার প্রতি সম্মান রেখে গাজীপুরে নির্বাচনের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান কবিতা খানম।

কমিশন এখন আপিল করবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা এখনও অফিসিয়ালি বিষয়টি (আদেশ) পাইনি। লিখিত আদেশ পেলে কমিশন বৈঠকে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আমরা এখনও রিটের সারমর্ম পাইনি।”