ঢাবির ঘটনা প্রাতিষ্ঠানিক নারী নির্যাতন: মকসুদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে আন্দোলনকারী তিন শিক্ষার্থীকে বের করে দেওয়াকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক নারী নির্যাতন’ বলেছেন কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2018, 01:27 PM
Updated : 22 April 2018, 01:27 PM

‘ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা’র দাবিতে রোববার আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল শিক্ষকের মানববন্ধন কর্মসূচিতে সংগতি জানিয়ে একথা বলেন তিনি।

মকসুদ বলেন, “মধ্য রাতে ছাত্রীদের হল থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা খুবই বেদনাদায়ক৷ বাংলাদেশে বিভিন্নভাবেই নারীরা নির্যাতিত হচ্ছেন৷ কিন্তু এই প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে৷ আর সে ঘটনা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ভূখণ্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে।”

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে হেনস্তার ঘটনা তদন্তে গত বৃহস্পতিবার রাতে তিন শিক্ষার্থীকে তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।

ক্ষোভ-বিক্ষোভের পর শুক্রবার রাতে আবার তাদের হলে ফেরত নেওয়া হয়।

এশার বিরুদ্ধে আন্দোলনরতদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে গত ১০ এপ্রিল রাতে তাকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

পরে আবার তার সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে হেনস্তাকারী হিসেবে ২৭ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করে তাদের নোটিস পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তার তদন্তের সময়ই ঘটে তিন শিক্ষার্থীকে বের করে দেওয়ার ঘটনা। সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সবিতা রেজওয়ানা রহমানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের হয়রানির অভিযোগও তুলেছেন আন্দোলনকারীরা।

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হচ্ছে

>> বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রাখতে হবে এবং তাদের মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে৷

>> ক্যাম্পাসে সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং বিধিসম্মতভাবে অন্য কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না৷

>> রাষ্ট্রীয় বাহিনী কিংবা বেসরকারি কোনো গোষ্ঠী দ্বারা কোনো ছাত্র-ছাত্রী যাতে আক্রান্ত না হয়, সেজন্য অবিলম্বে একটা বিশেষ সেল গঠন করতে হবে৷

>> অজ্ঞাতনামা কোনো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নয়, আন্দোলন চলাকালে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সাথে সুনির্দিষ্টভাবে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে৷

>> ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবনে নারকীয়ভাবে তাণ্ডব চালানোর ঘটনাগুলোর সাথে যারা সুনির্দিষ্টভাবে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে৷

>> বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবনসহ সকল আবাসিক এলাকাতে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে৷

>> শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে হবে এবং তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষা দিতে হবে ৷

শিক্ষকদের সব দাবির সাথে সংহতি জানিয়ে আবুল মকসুদ বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যে নারী নির্যাতন করা হয়েছে, তা যেন এদেশে আর দ্বিতীয় বারের মতো না ঘটে ৷ এটা সকলের কাছে খুবই লজ্জার।”

মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “আমরা কোনো বিশেষ রঙের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য এখানে দাঁড়াইনি। আমরা সাধারণ ছাত্র, শিক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ রক্ষার জন্য এখানে দাঁড়িয়েছি।”

বাম দল সিপিবিতে যুক্ত এই শিক্ষক বলেন, “আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও প্রক্টরের অনুমতি ছাড়া পুলিশ ঢুকতে পারে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে যারা রয়েছেন তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না।

“আমরা হলে হলে দেখতে পাই সেখানে সামন্ত প্রভুর কর্তৃত্ব কায়েম হয়েছে। কিন্তু সেই হলের প্রভোস্ট, সেই হলের হাউজ টিউটরের দায়িত্ব ছিল এই ধরনের কার্যক্রম থেকে তাদের বিরত রাখা। কিন্তু তারা দলের স্বার্থ দেখবেন, না কি ছাত্রদের স্বার্থ দেখবেই, এই দুয়ে দোদুল্যমান রয়েছেন।”

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, মনোবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক নাসরীন ওয়াদুদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিমউদ্দিন খান প্রমুখ।