জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বাড়াতে উচ্চ আদালতে দুদকের আপিল আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই প্রতিক্রিয়া জানান।
তিনি বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হচ্ছে রাতকানা বাদুড়ের মতো; শেখ হাসিনার নিজস্ব একটি প্রতিষ্ঠান। বিরোধী দল এবং বিরোধী দলের প্রধান নেত্রীকে বিপর্য্স্ত করা মানসিকভাবে, নানাভাবে নির্দয়-নিপীড়ন করার একটা যন্ত্র হচ্ছে দুদক।
“সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা মন্ত্রিত্ব করছেন, লুট হচ্ছে সারা দেশের রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি। তখন তার (দুদক) চোখ কানা হয়ে থাকে। আমি রাতকানা বাদুড় এজন্যই বলেছি। ”
দুদক চেয়ারম্যানের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “যে অন্ধ যে কানা সে কখনও স্বচ্ছতা দেখাতে পারবে না, অন্যের অপরিষ্কার সেটাও দেখতে পারবে না। কারণ এভাবেই তাকে (দুদক) তৈরি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের যে অস্বচ্ছতা, আওয়ামী লীগের যে দুর্নীতি, যে কলঙ্ক এত কিছু- তখন নির্লিপ্ত এই দুদক।
“কিন্তু বিএনপি ব্যাপারে, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে একেবারে উঠেপড়ে লাগে। কারণ তিনি (দুদক চেয়ারম্যান) যার চাকরি করেন, সেই চাকরিটা নিশ্চিত করতে এই কাজ করছেন। এটা (সাজা বৃদ্ধির আবেদন) সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ঘৃণ্য দুদকের চেয়ারম্যান একটা দলীয় এজেন্ডা নিয়ে এখানে কাজ করছেন।”
‘খালেদার জামিন নিয়ে ছিনিমিনি’
হাইকোর্টের দেওয়া খালেদা জিয়ার চার মাসের জামিন নিয়ে সরকার ছিনিমিনি খেলছে বলে অভিযোগ করেছেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা রাজনৈতিক, নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা রাজনৈতিক ও জামিন স্থগিতের আদেশও রাজনৈতিক।
“সারা দেশের জনগণ বিশ্বাস করে সব কিছুই করা হচ্ছে হীন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এবং সবচাইতে বড় রাজনৈতিক দলের প্রধানের ওপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে।”
রিজভী বলেন, ‘‘আদালতকে শুধু প্রভাবিত নয়, সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। আপনাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এটর্নি জেনারেলকে প্রশ্ন করতে চাই- কীভাবে তিনি বললেন যে, বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে মুক্ত হতে পারবেন না?
“সরকার যেন মুক্তিপণ আদায় করার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে এক ধুলি-ধূসরিত স্যাঁত-স্যাঁতে পরিত্যক্ত কারাগারে আটকিয়ে রেখেছেন একতরফা নির্বাচন বিপদমুক্ত করতে। বিএনপি চেয়ারপারসনকে নির্বাচনের বাইরে রাখার জন্যই সরকার এক নির্দয় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তার ওপর চাপ প্রয়োগের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চাচ্ছে। অর্থাৎ আপনি নির্বাচন করতে পারবেন না, আমি একতরফা নির্বাচন করব- এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে।”
‘‘যতদিন আপনি মেনে না নেবেন, ততদিন আপনি কারাগারে থাকবেন। তার এই যে চক্রান্ত, যে প্রক্রিয়ায় তাকে আটকিয়ে রাখা হয়েছে- এটাতে মনে হচ্ছে যে, সরকার মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টায় লিপ্ত আছে। আমরা বলতে চাই, বেগম জিয়ার ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করে লাভ হবে না। আগামী নির্বাচন দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই বিএনপি অংশগ্রহণ করবে।”
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
যশোরের অভয়নগরের ফরাজী মতিয়ার কাজী গোলাম হায়দার ডাবলু, গিয়াস হোসেন, হাবিবুর রহমান হাবিব, জেলা বিএনপির মশিয়ার রহমান, নওয়াপাড়ারর জাকির হোসেনসহ ২৭ জন নেতা-কর্মী নিম্ন আদালতে হাজির হলে তাদের কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।