এসএসসির প্রশ্নফাঁস: পরীক্ষার্থীদের উদ্বেগে না থাকার পরামর্শ

প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় এবারের এসএসসির কোনো পরীক্ষা বাতিল হবে কি না তা স্পষ্ট না করলেও এনিয়ে পরীক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন না থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এ সংক্রান্ত কমিটির প্রধান। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2018, 11:37 AM
Updated : 25 Feb 2018, 12:41 PM

সচিবালয়ের পরিবহন পুল ভবনে রোববার বিকালে এই কমিটি প্রধান কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, দুই-এক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেবেন তিনি।

প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে গণমাধ্যমে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করেছেন জানিয়ে সচিব বলেন, “যে সুপারিশ করব তা গোপনীয়। সরকার সুপারিশ পর্যালোচনা করবে, আমাদের সুপারিশ রাখতে পারে, নাও রাখতে পারে। এরপর সরকার সিদ্ধান্ত নিলে আপনারা জানতে পারবেন।”

পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করা হবে কি না- এই প্রশ্নে আলমগীর বলেন, “সেটা বলা যাবে না। আমরা শুধু একটু বলতে পারি ২০ লাখ শিক্ষার্থীর স্বার্থের কথা চিন্তা করেই আমরা সুপারিশ করব, সরকারও তাদের স্বার্থের কথা চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেবে।

“এরা তো আমাদেরই সন্তান। আমরা এমন কোনো সুপারিশ করব না যেটা তাদের জন্য ক্ষতি হবে। আর সরকারও এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না, যেটা তাদের জন্য কষ্টের বা ক্ষতিকর কিছু।”

চলতি এসএসসি ও সমমানের বেশিরভাগ বিষয়ের প্রশ্নই পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে।

বেশ কয়েক বছর ধরে ফেইসবুকে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হলেও সরকারের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হচ্ছিল।

সম্প্রতি ভয়াবহ আকারে প্রশ্ন ফাঁসের পর সরকার বলছে, পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে উদ্দেশ্যমূলকভবে শিক্ষকরা প্রশ্ন ফাঁস করে দিচ্ছেন।

এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের মধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় মনিটরিং এবং আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির জরুরি সভায় ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও বিটিআরসি প্রতিনিধি, আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধিদের ওই কমিটিতে রাখা রয়েছে।

সচিব আলমগীর বলেন, “প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত পর্যালোচনা করেছি। এসবের প্রমাণ হিসেবে বোর্ড, পুলিশ ও বিটিআরসির কাছে তথ্য-উপাত্ত চেয়েছিলাম, সেগুলো পর্যালোচনা করেছি, আরও কিছু কাজগপত্র পুলিশের কাছে চেয়েছি। আজকে চূড়ান্ত মিটিং, আর মিটিং হবে না যদি না পুলিশের কাছ থেকে কাগজপত্র পাওয়ার পর প্রয়োজন না পড়ে।”

এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কমিটির সভা শেষে আলমগীর জানিয়েছিলেন, এসএসসি পরীক্ষার একটি বিষয়ের সম্পূর্ণ এবং কয়েকটির আংশিক প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মিলেছে এবং ওইসব পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করবেন তারা।

প্রশ্ন ফাঁসের কোনো প্রমাণ পেয়েছেন কি- এই প্রশ্নে ওইদিন সচিব বলেন, “আছে, কিছু কিছু আংশিক আছে। কিছু কিছু পুরোপুরি আছে।”

“যদি দেখা যায় যে কোনো প্রশ্ন হবুহু মিলে গেছে… যদি অবজেকটিক টাইপের প্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকে বাকিটা পরীক্ষা নতুন করে নেব না, শুধু অবজেকটিভের জন্য পরীক্ষা হবে।”

আগের অবস্থান থেকে সরে এসে সচিব এখন বলছেন, “কোনো বিষয়ের রচনামূলক প্রশ্ন ফাঁস হয়নি, কিছু কিছু এমসিকিউ অংশ মিলেছে। … ১২টা পরীক্ষার জন্য ১২ রকমের ডিশিসন হতে পারে।

“পরীক্ষা বাতিল হবে কি হবে না তা এখনই বলা যাবে না। তারা (পরীক্ষার্থী) যেন কোনো উদ্বেগে না থাকে, তাদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে, তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই আমরা সুপারিশ করব।”

আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ থাকবে কি না- বেশ কয়েকবার সাংবাদিকরা সেই প্রশ্ন করলেও সুস্পষ্ট কোনো জবাব দেননি সচিব আলমগীর।

“বাতিল হবেও বলব না, বাতিল হবে না, সেটাও বলব না। তবে উদ্বিগ্ন থাকার কারণ নেই। সিদ্ধান্ত যেটাই নেওয়া হবে জাতির স্বার্থে নেওয়া হবে। ছাত্রছাত্রী-অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নাই।”

সচিব বলেন, সরকার কিন্তু জনগণের সুখ-শান্তির জন্য, সরকার কিন্তু জনগণকে উদ্বেগে রাখার জন্য না। উদ্বেগে রাখতে পারে অন্যরা। উদ্বিগ্নমুক্ত রাখাই সরকারের দায়িত্ব।