প্রশ্ন ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার

চলমান এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের কথা স্বীকার না করলেও পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2018, 12:04 PM
Updated : 4 Feb 2018, 12:46 PM

আর চলমান এসএসসি ও সমমানের বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে করণীয় নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন তিনি।

রোববার সচিবালয়ে এক জরুরি সভার পর শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এই যে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার যারা হোতা, যারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সে ধরনের যারা অপরাধী তাদেরকে ধরিয়ে দিতে পারলে, চিহ্নিত করে দিতে পারলে, সঠিক প্রমাণিত হলে ৫ লাখ টাকা পুরষ্কার দেওয়া হবে।”

কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, “পরীক্ষার সময় যেসব প্রশ্ন ওঠেছে যে (প্রশ্ন) ফাঁস হয়েছে সেটা ঠিক বা ভুল এসব বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে এবং তার ফলে পরীক্ষার্থীদের উপর কী প্রভাব পড়েছে, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছ কী হয় নাই, এসব মিলিয়ে পরীক্ষাটাকে কীভাবে ‍মূল্যায়ন করা যায় সেটা মূল্যায়ন করে পরীক্ষা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সুপারিশ করবেন, এজন্য একটি কমিটি আমরা করে দিচ্ছি।”

এই কমিটি এসএসসি ও সমমানের পুরো পরীক্ষা ‘মনিটর’ করবেন বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

এই পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েছে ফাঁস হওয়ঢা প্রশ্নেই (ফাইল ছবি)

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের দুই জন, শিক্ষা বোর্ডের তিনজন এবং বিটিআরসির একজন প্রতিনিধি থাকছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তা সদস্য সচিব হিসেবে কমিটিতে থাকবেন।

 নাহিদ বলেন, কমিটি প্রয়োজন মনে করলে আরও সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন।

এসএসসির বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে উত্তরসহ প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ে। পরীক্ষার পর দেখা যায় মূল প্রশ্নের সঙ্গে হবুহু মিল রয়েছে ওই ফাঁস প্রশ্নের।

সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সভার শুরুতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন ফেইসবুকে আসল বা নকল যে কোনো ধরণের প্রশ্নপত্র নিয়ে পোস্ট দেওয়ায় সঙ্গে জড়িতকে ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন।

নাহিদ বলেন, পরীক্ষার হলে কোনো শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা যে কাজেই যান না কেন কেউ কোনো ধরনের ফোন সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন না।

“যদি কারও কাছে ফোন পাওয়া যায় সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। কোনো পরীক্ষার্থীর কাছে পাওয়া গেলে তার পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাবে এবং মামলা হবে।”

পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষার হলে গিয়ে সিটে গিয়ে বসার বাধ্যবাধকতার কথা আবারও মনে করিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী।

এমসিকিউ প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে আগেই প্রশ্ন ওঠায় ২০১৭ সাল থেকে এমসিকিউ অংশ থেকে ১০ নম্বর কমিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে নাহিদ বলেন, শিক্ষাবিদদের নিয়ে আমরা সেমিনার করে এ বিষয়ে (এমসিকিউ উঠিয়ে দেওয়া) সিদ্ধান্ত নেব।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে শুধু (প্রশ্ন) ফাঁস করে টাকা ইনকাম করবার জন্য বা তার কোনো লাভ হবে এ উদ্দেশ্যে শুধু নয়, লক্ষ্য হাসিলের উদ্দেশ্য থাকে, সেই লক্ষ্যটা হচ্ছে সরকারকে মানুষের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করা, আস্থাটাকে নষ্ট করে দেওয়া।

“যারা (প্রশ্ন ফাঁস) করছেন তারা সরকারকে মানুষের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করতে চান এবং ছোট করতে চান। এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্রমূলক এর পেছনে উস্কানী রয়েছে। আশা করি কেউ বাদ যাবেন না, প্রত্যেকে ধরা পড়বে।”

ফেইসবুকে এখনও যারা প্রশ্ন ফাঁস করবেন বলে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন সেগুলো বন্ধ করা হবে কি না- এই প্রশ্নে নাহিদ বলেন, “অবশ্যই বন্ধ করা হবে। এজন্য বিটিআরসি, পুলিশসহ বিভিন্ন জনের দায়িত্ব আছে, এটা অবশ্যই করব আমরা।

পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ‘ভিজিলেন্স টিম’ আরও জোরদার করবের জানিয়ে নাহিদ বলেন, “পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিটের আগে প্রশ্নের প্যাকেট খোলা যাবে না। সেটা নিশ্চিত করার জন্য সব ডিসি ও ইউএনওদের আজকে নির্দেশ দিচ্ছি।”

চলতি এসএসসি ও সমমানের বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে মনে করেন কি না- এই প্রশ্নে নাহিদ বলেন, “এজন্যই আমরা কমিটি করে দিয়েছি যেন সঠিক যাচাই করতে পারি।”