সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব ইসির।
মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় ২৪ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে এই নির্বাচনের ক্ষণ গণনা; এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতিও শুরু করেছে।
এ নির্বাচন সামনে রেখে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠক ডাকা হয়েছে বলেও ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছিলেন।
তিনি সোমবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২৫ জানুয়ারি কমিশন বৈঠক হবে। পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে।”
এর মধ্যেই রাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন ঠিক হওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানান।
তিনি রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “১৯ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে বলে আমি ইসির কাছ থেকে জানতে পেরেছি।”
তফসিল ঘোষণার আগে আইনমন্ত্রী দিন জানিয়ে দেওয়ায় তা নিয়ে রাতে আর ইসির কেউ মুখ খুলতে চাননি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। ভোটের তারিখ নিয়েও আমার কিছু জানা নেই। আমার সামনে কমিশনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের (১৯ তারিখ) এরকম কিছু আলোচনাও হয়নি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, “২৫ জানুয়ারি কমিশন সভা রয়েছে, তাতেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। তাছাড়া ভোটের তারিখ ঠিক করার বিষয়টি সিইসি ও একজন নির্বাচন কমিশনারের বিষয় নয়। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হবে।”
আইনমন্ত্রী কীভাবে রাষ্ট্রপতির ভোটের তারিখ জানালেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই নির্বাচন কমিশনার।
আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হচ্ছে; এই নির্বাচনে ভোট দেবেন শুধু সংসদ সদস্যরা, ভোটগ্রহণ হবে সংসদে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাতে নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ নেন আবদুল হামিদ।
স্বাধীনতার পর থেকে ১৯ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৬ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসোবে আবদুল হামিদ এই পদে সপ্তদশ ব্যক্তি। বাংলাদেশের আইনে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারবেন।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মেয়াদ অবসানের কারণে রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হওয়ার ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তির তারিখের আগের নব্বই থেকে ষাট দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।
ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, সংবিধান অনুযায়ী, ভোট হতে হবে ২৪ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। সংসদের চলতি অধিবেশনেই এ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণার আগে স্পিকারের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইনের সপ্তম ধারায় বলা হয়েছে- নির্বাচনী কর্মকর্তা নির্ধারিত দিন, সময় ও স্থানে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করবেন। প্রার্থী একজন হলে এবং পরীক্ষায় তার মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হলে কমিশন তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। তবে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে নির্বাচনের জন্য তাদের নাম ঘোষণা করবে ইসি।
সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় একবারই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা। পরে প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
আইন অনুযায়ী, একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোটের আয়োজন করবেন। নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখে নিজের সই দিয়ে তা জমা দেবেন সাংসদরা।
ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদ কক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেওয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।