শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের শপথে শেষ হলো বাংলা সাহিত্য সম্মেলন

সব দ্বন্দ্ব-সংঘাতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিতের পক্ষে লড়াইয়ের ডাক দিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের কবি-সাহিত্যিকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2018, 03:04 PM
Updated : 15 Jan 2018, 06:52 PM

বাংলা একাডেমিতে আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে তারা একসঙ্গে বিশ্বের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এই শপথ নেন।

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে একাডেমির নজরুল মঞ্চে সমাপনী অধিবেশনে অংশ নেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন ভারতের চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান,  সাহিত্য উৎসবের প্রধান সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন ইউসুফ, ঝাড়খণ্ডের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী সরযূ রাই।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘ঢাকা ঘোষণা’ পাঠ করেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

তিনি বলেন, “আমরা সকল প্রকার বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব সংঘাতের বিরোধী এবং তাই বিশ্ব শান্তির পক্ষে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করছি। আমরা সকল মানুষের মৌলিক অধিকারে বিশ্বাসী এবং প্রত্যেক মানবগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা তাদের অলঙ্ঘনীয় অধিকার বলে ঘোষণা করছি।”

এসময় তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে কবি-সাহিত্যিক-লেখকরাও একযোগে বলে উঠেন, ‘আমরা মানুষের জন্য যা কিছু অকল্যাণকর, তা পরিহার করে সত্য ও কল্যাণের সাথে নিজেকে উৎসর্গ করা সকল লেখকের কর্তব্য বলে ঘোষণা করছি। আমরা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে ভূমিকা পালনের অঙ্গীকার করছি’।

এসময় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে স্বরচিত কবিতা ‘১০ জানুয়ারি ১৯৭২’ পাঠ করেন কবি কামাল চৌধুরী।

সাহিত্য সম্মেলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক। কিন্তু তাদের মনে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। আমাদের সমাজে ব্যাপক সমতা রয়েছে। ধনী-দরিদ্র বৈষম্য হচ্ছে, কিন্তু মেধার দ্বারা যে কেউ যেকোনো উচ্চতায় নিজের স্থান করে নিতে পারে।”

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “সাম্প্রদায়িকতা যখন বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে দিকে দিকে, তখন শুভবোধের উন্মেষ ঘটাতে, আমাদের সৃজনশীল, সুকুমারবোধের জাগরণ ঘটাতে হবে। লেখক-কবি বা শিল্পী সকলকে সেই আপোষহীন প্রতিজ্ঞা নিতে হবে।”

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, এ সম্মেলন সামনের দিনগুলিতে শুধু বাঙালিত্বের গৌরবকেই স্মরণ করবে না বরং সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ নির্দেশ করবে।

যোগেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দৃঢ় করতে এই সম্মেলন উজ্জীবিত করবে।

ঢাকা ঘোষণা ছাড়াও সমাপনী দিনের আয়োজনে ছিল তিনটি সেমিনার, নানা বিষয়ে তরুণদের অংশগ্রহণে নানা বিষয়ে কথোপকথন এবং গল্প পাঠের আয়োজন। পাশাপাশি মঞ্চনাটক ও লোকগানের সুরে শেষ দিনে জমজমাট ছিল সাহিত্য সম্মেলন।

দিনের প্রথম সেমিনার ছিল একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে। ‘ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি জাতিসত্ত্বা’ শিরোনামে এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৈয়দ আজিজুল হক।

পরে ‘প্রযুক্তির বিশ্বে সাহিত্যের সঙ্কট ও সম্ভাবনা’ শিরোনামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক-অনুবাদক রাজু আলাউদ্দীন।