বাংলা একাডেমিতে লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের মিলনমেলা

বাংলাদেশ ও ভারতের তিন শতাধিক লেখক-কবি ও সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে তিন দিনের আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2018, 02:40 PM
Updated : 13 Jan 2018, 02:41 PM

শনিবার বিকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরেই বাংলা একাডেমিতে শুরু হয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা।

সোমবার বিকালে সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলা সাহিত্যের সমকালীন ছোটগল্প, বাংলা সাহিত্যে দেশভাগের অভিঘাত, প্রযুক্তির বিশ্বে বাংলা সাহিত্যের সংকট ও সম্ভাবনা, ভাষা আন্দোলন ও বাংলা ভাষার জাতিসত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনের পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে তর্ক-বিতর্কে মেতে উঠবেন কবি-সাহিত্যিকরা।

‘বিশ্ব মানব হবি যদি কায়মনে বাঙালি হ’ প্রতিপাদ্যে দুই বাংলার তিন শতাধিক সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন পরিষদ। সহযোগিতায় রয়েছে বাংলা একাডেমি, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন ও ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে ছোট্ট একটি বইমেলারও। যাতে বাংলাদেশের ছয়টি প্রকাশনা সংস্থা ছাড়াও অংশ নিচ্ছে কলকাতার দৈনিক পত্রিকা আজকাল এবং কলকাতার পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলারস গিল্ড।

প্রথম দিনের আয়োজনের সবচেয়ে আলোচিত পর্বটি ছিল গল্প পাঠ ও কথা সাহিত্য আলোচনা।

বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলা সাহিত্যের সমকালীন ছোটগল্প’ শিরোনামের এ আয়োজনে গল্পপাঠে অংশ নেন দুই তরুণ কথাশিল্পী বদরুন নাহার ও জাহেদ মোতালেব।

ছোট গল্প ও বাংলা সাহিত্যের সমকালীন গল্প নিয়ে আলাপচারিতায় মেতে উঠেন পশ্চিমবঙ্গের ঔপন্যাসিক অভিজিৎ সেন ও স্বপ্নময় চক্রবর্তী। বাংলাদেশের কথাশিল্পীদের মধ্যে ছিলেন আনিসুল হক ও আহমাদ মোস্তাফা কামাল। পুরো আয়োজনটি সঞ্চালনা করেন পারভেজ হোসেন।

সম্মেলনটি উপলক্ষে স্থাপিত ‘অনেক আকাশ’ মঞ্চে ছিল ‘সাহিত্যের পরাগায়ন ও বাংলা সাহিত্য’ শিরোনামে উন্মুক্ত আড্ডা। এতে আলোচনা পর্বে অংশ নেন কুমার চক্রবর্তী, জুয়েল মাজহার ও রায়হান রাইন। পুরো আয়োজনটি সঞ্চালনা করেন চঞ্চল আশরাফ।

পৃথিবীর সঙ্গে অন্য ভাষার সাহিত্যের সংশ্লেষকে পরাগায়ন আখ্যা দিয়ে তরুণ লেখকরা বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যের সঙ্গে অন্য ভাষার একাঙ্গীনকরণের ক্ষেত্রে মৌলিকত্ব, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য কালেভদ্রে রাজনৈতিক চেতনার প্রভাবের নিদর্শন পাওয়া যায়।

উৎসব প্রাঙ্গণে প্রদর্শিত হয় সাহিত্যনির্ভর দুইটি চলচ্চিত্র। এগুলো হলো- মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলীর যৌথ পরিচালনার আবু ইসহাকের ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’ এবং গৌতম ঘোষের পরিচালনায় মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’।

ছিল মঞ্চনাটকও। একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘কে কথা কয়’ অবলম্বনে আসাদুল ইসলামের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ম্যাড থেটার মঞ্চস্থ করে নাটক ‘নদ্দিউ নতিম’।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন রোববার দিনভর রয়েছে নানা আয়োজন। অনুষ্ঠিত হবে তিনটি সেমিনার। একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে থাকছে ‘বাংলা সাহিত্যে দেশভাগের অভিঘাত’ ও ‘সাহিত্য ও চলচ্চিত্র’ শিরেনামের দুইটি সেমিনার।

কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিতব্য সেমিনারের শিরোনাম ‘বাংলা সংবাদ ও সাময়িকপত্রের দুইশ বছর’। একই স্থানে থাকছে গল্পপাঠ ও কথাসাহিত্য আলোচনা। এতে অংশ নেবেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।

‘অনেক আকাশ’ তাঁবুতে থাকছে একটি কবিতা পর্বের আয়োজন এবং পাঁচটি কথাপর্বের আয়োজন।তরুণ কবি-সাহিত্যিকরা এতে অংশ নেবেন। বিকালে রবীন্দ্রমঞ্চে থাকছে কবিতাপাঠ ও আবহমান বাংলা গানের আয়োজন। লালনমঞ্চে থাকছে লোকসংগীত ও আবৃত্তি।

সবশেষে সন্ধ্যায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ঢাকা থিয়েটারের পরিবেশনায় মঞ্চস্থ হবে সেলিম আল দীনের নাটক ‘ধাবমান’।