দুই যুগের পাকিস্তানি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের যে নতুন রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল, তার ৪৬ বছর পূর্তি উদযাপন করছে বাঙালি।
স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় স্মৃতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসাবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউনেস্কো। সেই স্বীকৃতির গৌরব নিয়েই উদযাপিত হবে এবারের বিজয় দিবস।
সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্বসভাতেও নিজেদের পরিসর দিন দিন বড় করে চলেছে।
এই উন্নয়নযাত্রা অব্যাহত রেখে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার এসেছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজয় দিবসের বাণীতে।
শনিবার বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্তিতে সরকারি-বেসরকারি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এ মাটির মুক্তির জন্য প্রাণ দেওয়া ৩০ লাখ শহীদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে দেশবাসী।
সরকারি-বেসরকারি সব ভবনে উড়বে জাতীয় পতাকা, সাভার স্মৃতিসৌধসহ দেশের সব শহীদ বেদীগুলো ভরে উঠবে শ্রদ্ধার ফুলে। বিজয়ের শোভাযাত্রায় মুখর হবে রাজপথ।
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও তা যে টিকবে না তা আঁচ করেছিলেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক, তারপর নিপীড়ন-নির্যাতন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের স্বাধিকার এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে প্রবল করে তোলে।
পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের স্বাধিকারের চাওয়াকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ১৯৭১ সালে অস্ত্রের মুখে রুদ্ধ করতে প্রয়াস চালিয়ে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল এই ভূখণ্ডের মানুষের উপর।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সেই প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এই বাংলার মানুষ। ন্যায্য অধিকারের সশস্ত্র সেই সংগ্রামে সহায়তার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসেছিল প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
এরপর ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী; লাল সবুজ পতাকা ওড়ে স্বাধীন ভূমিতে, নতুন দেশে।
বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে।
তার পরের কর্মসূচি আবর্তিত হবে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। বিজয় দিবসের প্রস্তুতির জন্য গত কয়েক দিন ধরে তা বন্ধ রেখে চলছিল ধোয়া-মোছার কাজ।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয়ের পরপরই স্বাধীনতার স্মারকে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
ভিআইপিদের শ্রদ্ধা জানানোর পর স্মৃতিসৌধ সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির শ্রদ্ধার ফুলে ভরে উঠবে স্মৃতিসৌধ।
স্মৃতিসৌধের অনুষ্ঠান চলার মধ্যেই রাজধানীতে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে শুরু হবে কুচকাওয়াজ। এই কুচকাওয়াজের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন মহড়া চলবে, যার প্রস্তুতি চলছে গত কয়েকদিন ধরে।
রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম নেবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
বিজয় দিবস উপলক্ষে নৌ-বাহিনীর বেশ কিছু জাহাজ সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা নেভাল জেটি, চট্টগ্রামের নিউমুরিং নেভাল জেটি, খুলনার বিআইডব্লিউটিএ রকেট ঘাট, চাঁদপুরে বিআইডব্লিউটি ঘাট, মোংলার দিগরাজ নেভাল বার্থ এবং বরিশালের বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে দুপুর ২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত জাহাজ পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন।
বিজয় শোভাযাত্রা, দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ।
বিজয় দিবসে কারাগার ও হাসপাতালগুলোতে করা হয়েছে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা। বেতার-টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে বিজয়ের অনুষ্ঠানমালা, সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
বিজয় দিবসের বাণীতে রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ বলেন, “১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে করণীয় বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ গত ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ইউনেস্কো ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য’ ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার-এ অন্তর্ভুক্ত করে ‘বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ জন্য আমরা গর্বিত।”
এই ৪৬ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রা এবং টানা দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের দেশ পরিচালনার বিষয়টি উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণীতে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি আজ বাংলাদেশ।”
যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করেছি। জনগণকে দেওয়া ওয়াদা অনুযায়ী যুদ্ধপরাধীদের বিচারকার্য পরিচালনা করছি, বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। যুদ্ধপরাধীদের বিচার অব্যাহত থাকবে।”