ইস্তাম্বুল গেলেন রাষ্ট্রপতি

জেরুজালেম নিয়ে নতুন করে আন্তর্জাতিক টানাপড়েন শুরুর প্রেক্ষাপটে মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসির ডাকা বিশেষ সম্মেলনে যোগ দিতে ইস্তাম্বুল গেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

সাজিদুল হক বঙ্গভবন প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2017, 04:57 PM
Updated : 11 Dec 2017, 04:57 PM

সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে টার্কিস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে রাষ্ট্রপতি ঢাকা বিমানবন্দর ছাড়েন।

বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতিকে বিদায় জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুসহ মন্ত্রিসভার সদস্য, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।

আরব দেশগুলোর আহ্বান উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতির ঘোষণা দেওয়ায় ওআইসির বর্তমান চেয়ার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান জোটের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের এই সম্মেলন ডেকেছেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এই সফরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে থাকছেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই সফরে রয়েছেন।

জেরুজালেম মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি- সব ধর্মের অনুসারীদের কাছেই পবিত্র নগরী। ইসরায়েল বরাবরই জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী বলে দাবি করে আসছে। অন্যদিকে পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী করতে চান ফিলিস্তিনের নেতারা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ৬ ডিসেম্বর এক ঘোষণায় জানান, জেরুজালেমকে তিনি ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করতে পররাষ্ট্র দপ্তরকে নির্দেশ দিচ্ছেন।

জেরুজালেম, গাজা, পশ্চিম তীর, রামাল্লা, হেব্রন, বেথেলহেম, নাবলুসসহ বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দেয় আরব ও ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘ।

ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের দল হামাস ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন ইন্তিফাদা (গণআন্দোলন) শুরুর ডাক দেয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার বলেন, “আমেরিকার রাষ্ট্রপতি সুয়োমোটো যে ঘোষণা দিয়েছেন, আমার কাছে মনে হয় এটা ইসলামিক ওয়ার্ল্ডে কারও কাছে গ্রহণযোগ্য না। কারণ এখানে জাতিসংঘের রেজুলেশন রয়েছে। রেজুলেশন অনুযায়ী কিন্তু পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ।”

জেরুজালেম বিষয়ে কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অনুসৃত নীতি পাল্টে দেওয়া ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্ররাও।

ট্রাম্পের ‘একতরফা’ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স।

যুক্তরাজ্য বলেছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোনো ভূমিকা রাখবে না। আর জার্মানি বলেছে, জেরুজালেমের মর্যাদা শুধু দ্বি-রাষ্ট্রীক সমাধানের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হতে পারে।

শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার মিশরের রাজধানী কায়রোতে আরব লীগের জরুরি বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের ঘোষণা বাতিল করার আহ্বান জানানো হয়।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, জেরুজালেম নিয়ে সীমা লঙ্ঘন করা উচিৎ হবে না।

যুক্তরাষ্ট্র ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে তেল আবিবের সঙ্গে তুরস্কের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করারও হুমকি দিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়,জেরুজালেমের স্বীকৃতির বিষয়টি অবশ্যই জাতিসংঘের রেজুলেশনের কাঠামোর মধ্যে রাখতে হবে।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে আবদুল হামিদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।