বিচারকদের চাকরিবিধি ‘চূড়ান্ত খসড়া’ সুপ্রিম কোর্টে

অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধির খসড়া চূড়ান্ত করে সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2017, 10:33 AM
Updated : 21 Nov 2017, 12:53 PM

তিনি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে ফেরত গেলেই ওই খসড়া অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে।

বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে মঙ্গলবার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ‘রিফ্রেশার কোর্সের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মন্ত্রী।

গত বৃহস্পতিবার রাতে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরিবিধি নিয়ে সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্যের অবসান ঘটেছে।

কাকরাইলে জাজেস কমপ্লেক্সে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার বাসভবনে ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণবিধির বিষয়ে কিছু মতপার্থক্য ছিল। আমি খুব আনন্দের সাথে বলছি, যেসব মতপার্থক্য ছিল সেসব দূর করেছি। শৃঙ্খলাবিধির ব্যাপারে আমরা ঐকমত্যে এসেছি।

“এখন বিধিমালার খসড়া রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে এবং তার অনুমোদন পেলে গেজেট প্রকাশ করা হবে। আশা করছি, ৩ ডিসেম্বর আদালতে শুনানির যে দিন রয়েছে তার আগেই গেজেট প্রকাশ হতে পারে।”

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের দীর্ঘ টানাপড়েনের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এর আগে একবার বিধিমালার খসড়া সুপ্রিম কোর্টে জমা দিলেও সম্প্রতি পদত্যাগ করা প্রধান বিচারপতি সিনহা গত ৩০ জুলাই তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মতপার্থক্য নিরসনে আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইন মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় ডেকেছিলেন তিনি। কিন্তু আইনমন্ত্রী সে সময় সুপ্রিম কোর্টে না যাওয়ায় গত ২০ অগাস্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি সিনহা।

এরই মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর দেশ ছাড়ার পর ১০ নভেম্বর ছুটি শেষে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন বিচারপতি সিনহা।

এরপর বিচারকদের চাকরিবিধির এ বিষয়টি গত ৮ অক্টোবর আপিল বিভাগে উঠলে সে সময় ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। ৫ নভেম্বর বিষয়টি আদালতে এলে অ্যাটর্নি জেনারেল আবারও সময়ের আবেদন করেন। শুনানি শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করে।

সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, “অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট নিয়ে আমি এতটুকু বলতে পারি, গত বৃহস্পতিবার আমরা (আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারকের সঙ্গে) বসেছিলাম এবং এ ব্যাপারে যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, তাতে আমাদের যে ক্ষুদ্র মতভেদ ছিল সেটা দূর হয়েছে এবং সমাধান হয়েছে।

“সেদিন বলেছিলাম গেজেটের খসড়া রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি যদি সেটিসফায়েড হন, তিনি যদি অনুমোদন দেন, তাহলে গেজেট প্রকাশের আর বিলম্ব হবে না।”

খসড়া প্রকাশের বিষয়টি কোন পর্যায়ে  আছে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, “পরিস্থিতি এরকম যে আমরা আলোচনার মাধ্যমে যে ড্রাফটে সম্মত হয়েছি, সেটার ফাইনাল ড্রাফট করা হয়েছে। গতকাল সেটা সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে যে মুহূর্তে ফিরে আসবে, আমি আইন মন্ত্রণালয় থেকে সেটা মাহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেব।”

অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশ নিয়ে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে টানাপড়েনের মধ্যে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন রেখেছিলেন- বিচার বিভাগে দ্বৈতশাসন চলছে।

যে গেজেট সরকার প্রকাশ করতে যাচ্ছে, সেখানে সেই ‘দ্বৈতশাসনের’ অবসান ঘটবে কি না- এমন প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, “যখন এটা বেরুবে নিশ্চই দেখবেন দ্বৈতশাসন আছে কিনা। দেখেন, উনার এসব কথার প্রত্যেকটার জবাব আমি দিতে পারব না। তার কারণ হচ্ছে, আমি দিব না।

“আরেকটা কথা হচ্ছে, আপনারা দেখেছেন, কত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়েছে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চলে যাওয়ার পরে। আমার মনে হয় বাকিটুকু আপনারা বুঝে নিতে পারবেন।”

আপিল বিভাগে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় হয়েছিল সাত বিচারকের বেঞ্চে। এখন সেখানে পাঁচ বিচারক আছেন। সেক্ষেত্রে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের রিভিউ শুনানির ক্ষেত্রে কোনো সঙ্কট হবে কি না, কিংবা বিচারক নিয়োগ করতে হবে কি না- এ প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। 

জবাবে সুপ্রিম কোর্ট রুলস থেকে উদ্ধৃত করে আইনমন্ত্রী বলেন, “রিভিউ শুনানিতে সাত বিচারপতি থকতে হবে সুপ্রিম কোর্ট রুলসে এমন কোনো কথা নেই আমার জানা মতে। এমন অনেক রিভিউ আছে যেখানে অনেকেই অবসরে গেছেন, কিন্তু রিভিউ শুনানি হয়েছে।”

তবে আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে বলে জানান তিনি।

বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ের জুডিশিয়াল কর্মকর্তাদের রিফ্রেশার কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও বিচারপতি খোন্দকার মুসা খালেদ, আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক উপস্থিত ছিলেন।

প্রশিক্ষণার্থী বিচারক ছাড়াও আইন মন্ত্রণালয় ও ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।