বিমান নিয়ে ‘জঙ্গি হামলার ছক’

ঢাকার দারুসসালামের যে বাড়িতে জেএমবি সদস্য আবদুল্লাহ কবুতরের খামার আর জঙ্গি আস্তানা গড়ে তুলেছিল, সেই বাড়ির মালিকের ছেলে বৈমানিক সাব্বির এমামসহ চারজনকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে বিমান নিয়ে ‘নাশকতার পরিকল্পনার’ অভিযোগে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2017, 09:16 AM
Updated : 1 Nov 2017, 11:01 AM

র‌্যাব বলছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফার্স্ট অফিসার সাব্বির (৩১) উড়োজাহাজ চালিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের বাসভবনে আঘাত করা অথবা বিমানের যাত্রীদের জিম্মি করে মধ্যপাচ্যে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের স্বীকার করেছেন।

গ্রেপ্তার বাকি তিনজন হলেন- সাব্বিরের মা সুলতানা পারভীন (৫৫),  সাব্বিরের মামাত ভাই আফিফুর রহমান আসিফ (২৫) ও ওই এলাকার চা দোকানদার মো. আলম (৩০)।

সোমবার রাত ২টা থেকে মঙ্গলবার বেলা ১১টার মধ্যে মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান র‌্যাবের  আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান। 

টাঙ্গাইলে জেএমবির জঙ্গি দুই ভাইকে আটকের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে মিরপুরের দারুস সালাম থানার বর্ধনবাড়ি এলাকায় ছয় তলা একটি ভবন ঘিরে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। পরদিন রাতে আত্মসমর্পণের আহ্ববান উপেক্ষা করে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গি আবদুল্লাহ।

৬ সেপ্টেম্বর ওই ভবনের পঞ্চমতলায় ঢুকে জঙ্গি আব্দুল্লাহ ও তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তানসহ সাতজনের খুলি ও পোড়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব।

‘কমল প্রভা’ নামের ওই বাড়ির মালিক হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদকে সেই সময়ই আটক করে র‌্যাব। তখনই জানা যায়, তার ছেলে সাব্বির বিমানের পাইলট।

মঙ্গলবার সাব্বিরকে গ্রেপ্তার করার পর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাব্বির ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি থেকে উড়োজাহাজ চালানো শেখেন এবং ২০১০ থেকে চার বছর রিজেন্ট এয়ারওয়েজে চাকরি করেন।

পরে তিনি রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমানে চাকরি পান । বিমানের ফার্স্ট অফিসার হিসেবে তিনি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ চালাতেন। সোমবারও তিনি ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা ফ্লাইট পরিচালনায় অংশ নেন বলে তথ্য দেওয়া হয় র‌্যাবের পক্ষ থেকে।

মুফতি মাহমুদ খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জঙ্গি আবদুল্লাহর সঙ্গে সাব্বিরের ঘনিষ্ঠতা ছিল। সাব্বির জেএমবিতে যোগ দেন এই সংগঠনকে নতুন করে সংগঠিত করার কাজে নেতৃত্ব দেওয়া সারওয়ার জাহানের কাছ থেকে। জেএমবির এই অংশটিকে ‘সারওয়ার-তামিম গ্রুপ’ হিসেবে বর্ণনা করে থাকে র‌্যাব।

“গুলশান হামলার আগে ও পরে আব্দুল্লাহ সাব্বির ও সারোয়ার একত্রে নাশকতার পরিকল্পনা করে।এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তারা বিমান চালিয়ে নাশকতার কথা আলোচনা করেছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাব্বির স্বীকার করেছে। চাকরির ভাতা বাবদ সাব্বিরের ১০ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল, যা সে হাতে পেলেই সংগঠনে দেবে বলে আবদুল্লাহকে কথা দিয়েছিল।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৬ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে জঙ্গি আব্দুল্লার সহযোগী বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে তার দেওয়া তথ্যেই মিরপুর থেকে সাব্বিরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মুফতি মাহমুদ বলেন, “ওই বাড়ির তিনজন- বাড়ির মালিক হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদ, তার স্ত্রী সুলতানা পারভীন ও ছেলে সাব্বির- তিনজনই জঙ্গিবাদে জড়ায়।জঙ্গি আব্দুল্লাহর বাসায় পারভিনের যাতায়াত ছিল। সেখানেই সে প্রভাবিত হয়। তার স্বামীও জঙ্গিবাদের জড়িয়ে পড়ার কথা আদালতে স্বীকার করেছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে বিমান নিয়ে নাশকতার কোনো পরিকল্পনার কথা এর আগে জানা যায়নি। সাব্বিররা আসলে কী করতে চেয়েছিল, তা তদন্তে হয়ত জানা যাবে।

তবে আর কোনো বৈমানিক সাব্বিরের মত জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানান মুফতি মাহমুদ।

বিমান নিয়ে হামলা পরিকল্পনার বিষয়টি কতটুকু তথ্যভিত্তিক- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই আপনাদের অবহিত করেছি। বাকি যে বিষয়গুলো আছে, তা অ্যানালাইসিসের বিষয়। তাকে গ্রেপ্তারের ফলে এরকম একটি পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়েছে, সেটাই মূল বিষয়।”