বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন কাদের।
তিনি বলেন, “ব্যাখ্যা আমরা পেয়েছি, এটা বলতে চাই না। যদি কোনো ব্যাখ্যা দিতে হয় নির্বাচন কমিশন দেবে। তবে তাদের সঙ্গে যে আলোচনা, নির্বাচন কমিশনার থেকে সচিব, প্রত্যেকের যে বক্তব্য, তাতে পজিটিভ ডায়ালগ আমরা করেছি, কনস্ট্রাকটিভ আলোচনা হয়েছে।”
গত রোববার বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসে সিইসি নূরুল হুদা দলটির নেতা সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের গুণগান করেন।
তিনি বলেন, ব্যক্তি হিসেবে এবং দলনেতা হিসেবে জিয়াউর রহমান চার বছর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তার হাত দিয়েই দেশে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা’ পায়।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপে ওই বক্তব্যের কারণে ক্ষমতাসীন দলের অনেকের সমালোচনার মুখে পড়তে হয় সিইসিকে।
এরপর বুধবার বেলা ১১টা থেকে আওয়ামী লীগের ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে সিইসি বলেন, দেশের সব অর্জন ‘আওয়ামী লীগের হাত ধরেই’ এসেছে।
পরে সংলাপের সময় আওয়ামী লীগের লিখিত প্রস্তাবে ‘গণতন্ত্র ও নির্বাচন’ বিষয়ে বলতে গিয়ে জিয়ার প্রসঙ্গ টানেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের হোতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন লঙ্ঘন করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের সংবিধান ও সকল প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ধ্বংস করে দেন, শুরু হয় স্বৈরশাসনের।”
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘স্বৈরশাসক’ জিয়া তার অবৈধ ক্ষমতার বৈধতা পাওয়ার চেষ্টায় ১৯৭৭ সালে ‘প্রহসনের’ গণভোটের আয়োজন করেন। তাতে সাধারণ মানুষ ‘ভোটাধিকার হারায়’ এবং সব গণতান্ত্রিক পরিবেশ ‘নষ্ট হয়ে যায়’। এর ধারাবাহিকতা চলে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর আরেক ‘স্বৈরশাসক’ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন পর্যন্ত।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরে সাংবাদিকদের বলেছেন, “সিইসির বক্তব্য ভুলভাবে ব্যাখ্যার অবকাশ থাকায় বিতর্ক এড়ানোর জন্য কমিশনকে সতর্কতার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ একজন নেতা।”
অবশ্য ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলছেন, সিইসির সূচনা বক্তব্যের পর সংলাপে ওই প্রসঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি।
সূচনা বক্তব্যে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, প্রতিটি দলের সঙ্গে সংলাপেই সংশ্লিষ্ট দলের প্রোফাইল তুলে ধরা হয়।
নয় মিনিটের সূচনা বক্তব্যে সিইসি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসার পাশাপাশি আওয়ামী সরকারের উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরেন। পরে ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদও ক্ষমতাসীন দলের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সংলাপের পরে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। খুবই সাকসেসফুল, উনারাও খুশি। বৃহস্পতিবার আর দুটি দলের সঙ্গেও সফলভাবে সংলাপ শেষ করব।”
জিয়ার গুণগান নিয়ে ‘আ. লীগের ব্যাখ্যা চাওয়া’ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, “সংলাপে এ নিয়ে আর কথা হয়নি; দুই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় আর কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেনি কেউ।”
‘দৃষ্টি কাড়তেই বর্জন কাদের সিদ্দিকীর’
ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, এ পর্যন্ত সব দলের সঙ্গে সংলাপ ‘খুব সুন্দরভাবে’ এগিয়েছে। তার মধ্যে কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ সবচেয়ে বেশি সময় আলোচনায় অংশ নিয়েছে। কিন্তু তারাই সংলাপ বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে ‘গণমাধ্যমের দৃষ্টি কাড়তে’।
“তিন ঘণ্টার মত আলোচনা করেছে ওই দলটি; খাওয়া-দাওয়াও করেছে। সুন্দরভাবে আলোচনা করেছে। আর বাইরে গিয়ে বর্জনের ঘোষণা দিল। উনারা আসলে গণমাধ্যমের হেডলাইন পেতে এ ধরনের কথা বলেছেন।”
সোমবার সংলাপের পর বেরিয়ে এসে কাদের সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, জিয়াকে নিয়ে সিইসির বক্তব্যের সঙ্গে তিনি একমত নন। এ কারণে তারা সংলাপ ‘বয়কট’ করে বেরিয়ে এসেছেন।