নিরাপত্তা পরিষদে সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারকে ফের আহ্বান

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ‘আরিয়া ফর্মুলা’ বৈঠক থেকে মিয়ানমারের প্রতি ফের আহ্বান জানানো হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2017, 07:20 AM
Updated : 20 Oct 2017, 06:10 AM

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর নিরাপত্তা পরিষদের ওই অনানুষ্ঠানিক গোপনীয় বৈঠকে অংশ নেওয়া বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিরা দেশটির প্রতি এ আহ্বান রাখেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বৈঠকে রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশনের চেয়ারম্যান জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান, জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই-কমিশন ইউএনএইচসিআর ছাড়াও বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা সহিংসতা বন্ধের এ আহ্বান জানায়।

মন্ত্রী বলেন, রাখাইনে অগাস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু সহিংসতা এখনও বন্ধ হয়নি বলে বৈঠকে তুলে ধরেন ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি। তার বক্তব্যে রাখাইন রাজ্যের ‘প্রকৃত চিত্র’ অনেকটাই উঠে আসে।

“বিশেষত সহিংসতা বন্ধের কোনো লক্ষ্যণই দেখা যাচ্ছে না এবং (বাংলাদেশে) অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেই চলেছে বলে তারা উল্লেখ করেছেন। রাখাইনের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত নির্মম নির্যাতনের কথাও তাদের ব্ক্তব্যে উঠে এসেছে।”

মাহমুদ আলী জানান, সহিংসতা বন্ধ ও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে সেকথা কফি আনান তার বক্তব্যে তুলে ধরেছেন।

“তার নেতৃত্বাধীন কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণ করায় এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানোয় মিয়ানমারকে তিনি ধন্যবাদ দেন। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে তার কমিশনের সুপারিশ সমূহ বাস্তবায়নে বিশেষত বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।

“ড. আনান এ বিষয়ে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর ভূমিকা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া মিয়ানমারে অবিলম্বে সহিংতা বন্ধ করে রাখাইনে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রবেশাধিকার দিতে আহ্বান জানান তিনি।”

দমন-পীড়নের মুখে ইতোমধ্যে প্রায় পৌনে ছয় লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আগে থেকে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করায় কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে।

এ অবস্থায় এখনও নির্যাতনের মুখে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশমুখী হচ্ছে অসংখ্য রোহিঙ্গা। গত দুই মাসে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বারবার সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানানো হলেও মিয়ানমার সাড়া দেয়নি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী জানান, ‘আরিয়া ফর্মূলা সভা’ শেষে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মাসের সভাপতি ফ্রান্স সহিংসতার এ ঘটনাকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ আখ্যায়িত করেছে।

সমসাময়িক সঙ্কট বা সমস্যা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের অনানুষ্ঠানিক গোপনীয় সভা ‘আরিয়া ফর্মুলায়’ পরিষদের সদস্য রাষ্ট্র ছাড়াও সংশ্লিষ্ট অন্য রাষ্ট্র, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের উদ্যোগে আয়োজিত এবারের আরিয়া ফর্মূলা সভায় নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ দেশ এবং অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র বলিভিয়া, মিশর, ইথিওপিয়া, ইতালি, জাপান, কাজাখস্তান, সেনেগাল, সুইডেন, ইউক্রেন ও উরুগুয়ে ছাড়াও আমন্ত্রিত হিসেবে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইইউ, ওআইসি, ইউএনএইচসিআর ও জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ অংশ নেয়।

এ বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের দুই মিত্র দেশ রাশিয়া ও চীনের মধ্যে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে অবস্থানের পরিবর্তন দেখা গেছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্য।

তিনি বলেন, “রাশিয়া কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়ন চেয়ে বক্তব্য দিয়েছে। চীন প্রতিবেদন বাস্তবায়নের কথা না বললেও তাদের বক্তব্য আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।”