রোহিঙ্গা সঙ্কট: আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি স্পিকারের

চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কটের শিকড় মিয়ানমারে তুলে ধরে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2017, 08:48 AM
Updated : 17 Oct 2017, 08:48 AM

স্থানীয় সময় সোমবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ইকোসক চেম্বারে ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট ও বাংলাদেশের মানবিক সহযোগিতা বিষয়ে’ এক ব্রিফিংয়ে এ আহ্বান জানান স্পিকার।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা ও জরুরি ত্রাণ বিষয়ক সমন্বয়কারী এবং জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক্ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মার্ক লোকক্ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরেজমিনে পরিদর্শনকালে তার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। বাস্ত্যুচ্যুত রোহিঙ্গাদের উদারভাবে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই মানবিক আশ্রয়দানে অনন্য সাহসিকতা ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছেন। অসহায় রোহিঙ্গাদের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।”

গত ২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে নৌকা ডুবে প্রতি সপ্তাহেই তাদের মৃত্যুর খবর আসছে।

সোমবার ভোরেও টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপের ডাঙ্গাপাড়া পয়েন্টে নৌকাডুবির ঘটনায় ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছে আরও ৩১ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্পিকার নিজের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের ভিত্তিতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অমানবিক অবস্থার বর্ণনা তুলে ধরেন।

তিনি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে স্থায়ী ও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

শিরীন শারমিন বলেন, “আমরা এই সমস্যার জরুরি সমাধান চাই, যাতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিরাপদে ও সম্মানের সাথে তাদের ঘরে ফিরতে পারে এবং প্রতিবেশীদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অর্থপূর্ণ জীবন কাটাতে পারে। এই সংকটের শিকড় মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও মিয়ানমারেই নিহিত। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব।”

সহিংসতা ও জাতিগতভাবে রোহিঙ্গা নির্মূলের প্রক্রিয়া বন্ধের আহ্বান জানিয়ে স্পিকার বলেন, “মিয়ানমারে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন প্রেরণ, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেইফ জোন তৈরি, জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা মানুষদের নিজ ভূমিতে স্থায়ী প্রত্যাবর্তন এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।”

ব্রিফিংয়ে ইউএনএইচসিআর, আইওএম, ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচও, রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট এর প্রতিনিধিরা ছাড়াও কুয়েত, তুরস্ক, সৌদি আরব, সুইডেন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশ এবং ইইউর রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।

কফি আনানের সঙ্গে বৈঠক

পরে সন্ধ্যায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও অ্যাডভাইজরি কমিটি অন রাখাইন স্টেটের চেয়ারম্যান কফি আনানের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠককালে তিনি একটি সুদূরপ্রসারী ও গঠনমূলক প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য কফি আনানকে ধন্যবাদ জানান।

কফি আনান চলমান পরিস্থিতিতে মানবিক ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের জন্য স্পিকারকে অনুরোধ করেন।

তিনি মিয়ানমারের অব্যাহত অনুপ্রবেশের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এখন পর্যন্ত সঙ্কট চলমান থাকার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করেন।

কফি আনান অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ এবং রাখাইন প্রদেশের উপদ্রুত এলাকাগুলোতে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবিক সহায়তা সংস্থা এবং গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।

এসব ধারণা ও সুপারিশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার জন্য কফি আনানকে অনুরোধ জানান স্পিকার শিরীন শারমিন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণের আলোকে জাতিসংঘের সাবেক এই মহাসচিবকে সুবিধাজনক দ্রুত সময়ে বাংলাদেশ সফরের অনুরোধ জানান স্পিকার।