শরণার্থী প্রশ্নে ট্রাম্পের কাছে কী আশা করার আছে: হাসিনা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার কথা হয়েছে, কিন্তু এ বিষয়ে তার কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন না, কারণ শরণার্থী বিষয়ে নিজের ভাবনার কথা ট্রাম্প আগেই স্পষ্ট করেছেন।

>>রয়টার্স
Published : 19 Sept 2017, 08:40 AM
Updated : 20 Sept 2017, 03:10 AM

জাতিসংঘের সংস্কার নিয়ে সোমবার নিউ ইয়র্কে এক উচ্চ পর্যায়ের সভার পর ট্রাম্পের সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা হয় বলে রায়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে জানান শেখ হাসিনা।  

“তিনি শুধু জানতে চাইলেন বাংলাদেশের কী খবর? আমি বললাম, বাংলাদেশ খুবই ভালো অবস্থায় আছে। তবে আমাদের একমাত্র সমস্যা হল মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীরা। কিন্তু তিনি শরণার্থীদের বিষয়ে কিছু বলেননি।”

মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে সেনাবাহিনীর চলমান অভিযানে গতমাসের শেষ ভাগ থেকে এ পর্যন্ত চার লাখ দশ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে জাতিসংঘ বর্ণনা করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে।    

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শরণার্থীদের বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। সুতরাং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য তার কাছে সাহায্য চাওয়া অর্থহীন। 

“যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তাদের দেশে তারা কোনো শরণার্থীকে ঢুকতে দেবে না। তাদের কাছ থেকে আমি কী আশা করতে পারি, বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে? তিনি তো নিজের মনোভাব জানিয়ে দিয়েছেন... তাহলে আর তার কাছে কেন সাহায্য চাইব?”

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ ধনী দেশ নয়। আমাদেরই এখন ১৬ কোটি মানুষ। দেশের আয়তনও খুব কম।... যদি আমরা ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারি, তাহলে আরও ৫ অথবা ৭ লাখ মানুষকে খাওয়াতে পারব।”

এ বিষয়ে হোয়াইট হাউজের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের প্রেসিডেন্টের আলোচনার বিষয়ে তিনি অবগত নন।

তবে তিনি এও বলেছেন যে, ট্রাম্প এ বিষয়ে খুবই আগ্রহী এবং কেউ বিষয়টি সামনে আনলে তিনি অবশ্যই কথা বলবেন। 

চলতি বছরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী বিষয়ক কর্মসূচি ১২০ দিনের জন্য স্থগিত করার চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে মুসলিম প্রধান ছয় দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ওপর ৯০ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেন।

গত শুক্রবার এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতা আরও বিস্তৃত, আরও কঠোর এবং আরও সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যা হল, সেটা ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ হবে না।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলছেন, সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে এবং যাচাই-বাছাইয়ের আরও সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া চালুর জন্যই যুক্তরাষ্ট্রে ওই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দরকার।

ট্রাম্পের ওই আদেশ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না সে বিষয়ে আগামী মাসে সুপ্রিম কোর্টে শুনানির তারিখ রয়েছে।

মিয়ানমারের রাখাইনে সাম্প্রতিক সহিংসতা শুরুর আগে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস ছিল। নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত রাখার পাশাপাশি তাদের চলাচলেও ছিল কড়াকড়ি। মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অনেকেই রোহিঙ্গাদের বিবেচনা করেন ‘বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে।

শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি চান, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে আরও চাপ দেওয়া হোক।

“তাকে (মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি) এটা মানতে হবে যে এই মানুষগুলো তার দেশের এবং মিয়ানমারই তাদের দেশ। তাদের উচিৎ এই মানুষগুলোকে ফিরিয়ে নেওয়া। এই মানুষগুলোকে দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে।”

রাখাইনে সহিংসতা বন্ধের উদ্যোগ না নেওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার মুখে রয়েছেন নোবেলজয়ী সু চি।

মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থং তুন সোমবার রয়টার্সকে বলেন, যারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে, তাদের ফেরার বিষয়টি মিয়ানমার হয়ত নিশ্চিত করবে। কিন্তু তা হতে হবে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। সেজন্য আলোচনা করতে হবে।”

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হেলি মিয়ানমার সরকারের প্রতি সেনা অভিযান বন্ধের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিশ্চত করতে এবং তাদের নিরাপদে ফিরে যাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সোমবার জাতিসংঘে যুক্তরাজ্য আয়োজিত এক সভার পর তিনি বলেন, “মানুষ এখনও হামলা ও হত্যার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। যাদের দরকার, তাদের কাছে সাহায্য পৌঁছাচ্ছে না। নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকরা এখনও পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি প্যাট্রিক মার্ফির চলতি সপ্তাহেই মিয়ানমারে যাওয়ার কথা রয়েছে।