‘টাকা নিয়ে’ পাহাড়ে বসছে রোহিঙ্গাদের অবৈধ বসতি

দমন-পীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে একদল লোক টাকা নিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ায় পাহাড়ের ঢালে তাদের ঘর করতে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2017, 05:27 PM
Updated : 6 Sept 2017, 05:30 PM

বালুখালিতে সামাজিক বনায়নের জন্য বরাদ্দকৃত জমিতে এসব ঘর তৈরি করা হচ্ছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রভাবশালীদের ২১ জনের একটি দল পরিবার প্রতি তিন হাজার করে টাকা নিয়ে রোহিঙ্গাদের ঘর বানাতে দিচ্ছে বলে বালুখালি সামাজিক বনায়ন প্লট সমিতির সভাপতি আলমগীর নিশা অভিযোগ করেছেন।

তিনি বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই চক্রে কয়েকজন সাবেক মেম্বার, কয়েকজন ডাকাত ও খারাপ প্রকৃতির মানুষ রয়েছে। এদের সঙ্গে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটরও আছেন। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে আমাদের সমস্যা হবে।”

তিনি কারও নাম না বললেও স্থানীয় কয়েকজন এই দলের প্রধান হিসেবে পালংখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল কাদের ভুট্টোর নাম বলেছেন।

তিনি বলেন, “তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ধরে এনে তাদের পকেট চেক করে টাকা নিয়ে পাহাড়ি ঢালে মাসিক ৫০০ বা ১ হাজার টাকা ভাড়ার ভিত্তিতে বরাদ্দ দিচ্ছেন।”

গত বছরের শেষ দিকে মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেককে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীর মাঝখানে একটি এলাকায় থাকতে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তাদের আবাসনের জন্য ওই এলাকার ৫০ একর জমি বরাদ্দের জন্য বন বিভাগের কাছে আবেদন করা হয়েছে। নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদেরও সেখানে স্থান দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

ওই এলাকার প্রায় দুই মাইল দূরে পাহাড়ি ঢালে এই রোহিঙ্গা বসতি গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানান সেখানে সামাজিক বনায়নের জন্য জমি ইজারা নেওয়া সিরাজুল কবির।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই প্লট সরকার আমাকে বনায়নের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। এখন ফজলুল কাদের ভুট্টোর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জোর করে টাকা নিয়ে ভাড়ার ভিত্তিতে ঘর বানিয়ে দিচ্ছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিয়ানমার থেকে আসা সানজিদা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত সোমবার আমরা এক সাথে দুই পরিবার এসেছি। বালুখালীর পাহাড়ের ঢালে ঘর করার জন্য হুন্ডি আনোয়ার ও নূরুল আলম বাঘা আমাদের কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা নিয়েছে।

“পরের মাস থেকে ৫০০ টাকা করে ভাড়া দাবিও তারা করে গেছে। কিন্তু আমরা ভাড়া কোথা থেকে দেব?”

আরেক শরণার্থী মোহাম্মদ হোছন বলেন, “আমার সাথে চারটি পরিবার আছে। সাবেক মেম্বার ফজলুল কাদের ভুট্টো ও ফখরুদ্দিন আমার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নিয়েছেন।”

শরণার্থী মোহাম্মদ রশিদ বলেন, “আমরা ছয় পরিবার একসাথে থাকতে চেয়েছি। তিনদিন আগে ছয়টি ঘর করার জন্য আমার কাছ থেকে বার্মাইয়া সৈয়দ নূর ও মাহমুদুল হক ১৮ হাজার টাকা নিয়েছে।”

মোহাম্মদ ফরিদ আলম বলেন, আকবর আহমদ নামে একজন তার কাছ থেকে চার হাজার টাকা নিয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঘর করতে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নূরুল আলম বাঘা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হ্যাঁ, সত্য। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে একটি সিন্ডিকেট টাকা নিচ্ছে। কিন্তু ওই সিন্ডিকেটে আমি নেই। আমি টাকাও নিচ্ছি না।”

রোহিঙ্গারা তাকে টাকা দেওয়ার কথা বলেছে জানালে তিনি বলেন, “যারা বিপদে পড়ে আমাদের দেশে এসেছে তাদের কাছ থেকে আমি কীভাবে টাকা নেই বলেন?”

অভিযোগের মুখে থাকা সাবেক ইউপি মেম্বার আব্দুর রহিম রাজা বলেন, “আমি সাবেক মেম্বার, সে হিসেবে ওই সিন্ডিকেটে আমাকে রাখতে পারে। কিন্তু আমি কিছু জানি না, কোনও টাকা-পয়সা পাইনি।”

কয়েক দিন আগে একদল রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার সময় তাদের কাছ থেকে গরু-ছাগল কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাইয়ের অভিযোগে উখিয়া থানা যুবলীগের নেতা মাসুদ আমিন শাকিলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

একই ঘটনায় দুদিন আগেও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে জানিয়ে উখিয়া থানার ওসি আব্দুল খালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনও কেউ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে অন্যায় করলে বা টাকা আদায় করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পাহাড়ি ঢালে করতে দেওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে কেউ আমাকে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেব।”