প্রয়োজনে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেই নির্বাচন: সিইসি

সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা থেকে উঠে আসা পরামর্শের ভিত্তিতে প্রয়োজনে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2017, 01:42 PM
Updated : 31 July 2017, 04:36 PM

সোমবার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ শেষে ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
ধারবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে পর‌্যায়ক্রমে রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে বলে জানান সিইসি।

তিনি বলেন, “আমাদের ধারাবাহিক আলোচনা হবে। সবার বক্তব্য শুনে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন করব। সেখান থেকে যেসব উপাদান.. সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করা প্রয়োজন সেগুলো আমরা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় চিন্তা করব।”

নাগরিক সমারে প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে সিইসি বলেন, “তাদেরকে আমরা আশ্বস্ত করেছি- আইনের আলোকে নির্বাচন পরিচালনার যে ক্ষমতা ইসির সাংবিধানিকভাবে রয়েছে তা পরিপূর্ণভাবে করা হবে।”

সিইসি জানান, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সবচেয়ে বেশি পরামর্শ দিয়েছেন কমিশনকে ‘সাহসিকতার’ সঙ্গে কাজ করার জন্য; তাগিদ দিয়েছেন জনগণের আস্থা অর্জনের।

তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে সংলাপ শুরু হয়েছে। এ পর‌্যন্ত কমিশনের সব কার‌্যক্রম নিরপেক্ষভাবে করা হয়েছে। বলা যায়- আস্থা অর্জনের কাজগুলো কমিশনে করে যাচ্ছে।

“ইসি একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। সেখানে সরকারের কারা থাকবে বা কারা থাকবে না সেটার চেয়েও বড় কথা হল- কঠোরভাবে, কঠিনভাবে এ নির্বাচন পরিচালনা আমাদের করতে হবে। জাতি আমাদের কাছে প্রত্যাশা করে সুষ্ঠু, ভালো নির্বাচন। আমরা যেন তা করতে পারি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা তা মনে করিয়ে দিয়েছেন।”

সংলাপের মাধ্যমে সরকার ও রাজনৈতিক দলের ওপর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন সিইসি। তবে সংলাপের সুপারিশ নিয়ে সরকার চাপে থাকবে কিনা তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

“রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে অনেকে বলেছেন এসব ইসির এখতিয়ারভূক্ত না। সরকার গঠন করা বা কেয়ারটেকার গঠনে কোনটা ইসির এখতিয়ারে রয়েছে, কোনটা নেই- উনারা বিজ্ঞ ব্যক্তি, তারা জানেনও। তবে সবার কথা প্রতিবেদন আকারে সরকারের কাছে পাঠাব, এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠাব।”

সংলাপের মাধ্যমে বিএনপিকে আস্থায় আনা কিংবা সরকারকে চাপে রাখা হবে কীনা- এমন প্রশ্নে নূরুল হুদা বলেন, “আমার তো মনে হয়, সরকারের কাছে বার্তা পৌঁছবে সুশীল সমাজ কী ভাবেন; যারা বিরোধী দলে বা সংসদের বাইরে রয়েছে তাদের কাছেও তা পৌঁছে যাবে। আমার মনে হয়, এতে তারা একটা সমঝোতায় আসতে পারবেন। আমরা ধারণা- এর মাধ্যমে একটা প্রভাব পড়বে; তবে বাধ্য করতে (সুশীল সমাজের চাওয়া বাস্তবায়ন) পারব কিনা জানি না।”

সিইসি জানান, সুশীল সমাজের সঙ্গে সংলাপে ভোটে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে যেমন অনেকে দাবি তুলেছেন, তেমনি সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিলে পুলিশ, বিজিবি ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর অন্যদের ক্ষমতা খর্ব হবে বলেও মত দিয়েছেন।

অনেকে না ভোট চালুসহ নানা ধরনের সুপারিশ তুলে ধরেছেন বলেও জানান নূরুল হুদা।

যারা উপস্থিত ছিলেন

হোসেন জিল্লুর রহমান, এম এম আকাশ, খুশী কবির, মাহবুবা নাসরীন, ইফতেখারুজ্জামান, মহিউদ্দিন আহমদ, মো. আবদুল লতিফ মণ্ডল, দিলারা চৌধুরী, সলিমুল্লাহ খান, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, রাশেদা কে চৌধুরী, মুহম্মদ আবুল কাশেম, আলী ইমাম মজুমদার, তারেক শামসুর রহমান, ওয়ালিউর রহমান, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, সাইফুল হক, সঞ্জীব দ্রং, মিজানুর রহমান খান, আবুল হাসান চৌধুরী, এ এফ এম গোলাম হোসেন, মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ফিলীপ গায়েন, রোকেয়া আফজাল রহমান, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, আসিফ নজরুল, তাসনিম সিদ্দিকী, জহুরুল আলম, সা’দত হুসাইন, অজয় রায় ও শারমীন এস মুরশিদ।

দুই জনকে বের করে দেওয়া হয়

সংলাপে আমন্ত্রিত না হয়েও নির্বাচন কমিশনে নির্ধারিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকায় দুই জনকে বের করে দেওয়া হয়।মতবিনিময় সভার শুরুতে কবি ও নতুন রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচয় দিয়ে নিজের পরিচয় তুলে ধরেন লুবনা হাশেম। আলী হাসান আসকারী নামে একজনও উপস্থিত ছিলেন সভাস্থলে। তারা উপস্থিতির তালিকায় স্বাক্ষরও করেন।

বিষয়টি ধরতে পেরে সাড়ে ১১টার দিকে তাদরকে বের করে দেওয়া হয়। তারা গণমাধ্যমে সংলাপ আয়োজনের বিষয়টি দেখেই ইসিতে চলে এসেছেন বলে জানান।

আরও যেসব সুপারিশ উঠে এসেছে সংলাপে

>অনলাইনে মনোনয়নপত্র চালু

>ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করা যায় কিনা

> ভোটার স্লিপ ইসির উদ্যোগে বিতরণ

> নির্বাচনকালীন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ইসির নিয়ন্ত্রণে

>নির্বাচনী ব্যয় কমানো, তদারকি কমিটি করা

>সোশ্যাল মিডিয়া তদারকি

>ভোটকক্ষে কোনো মোবাইল নয়

>গণমাধ্যমে প্রার্থী ও দল নিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন রোধে আচরণবিধিতে যুক্ত করা

>নির্বাচনী ব্যয় ও প্রচারণা করিয়ে দেবে ইসি ও সরকার

>সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোট

>প্রবাসী কোটি ভোটারকে তালিকাভূক্ত ও ভোটাধিকার প্রয়োগে ব্যবস্থা

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান প্রতিনিধিদের এসব সুপারিশের বিষয়টি ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন।