রামপালে কাজ থামবে না, সমীক্ষাও হবে: তৌফিক ইলাহী

ইউনেসকোর সুপারিশ অনুযায়ী পরিবেশগত সমীক্ষা চালানোর পাশাপাশি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজও এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2017, 11:13 AM
Updated : 31 July 2017, 01:32 PM

“কোনো মিটিগেটিং মেজার (পদক্ষেপ) নেওয়ার প্রয়োজন হলে আমরা সেটা নেব। তারা যেমন পরিবেশ বিষয়ে সচেতন, তেমনি আমরাও সুন্দরবনের যাতে ক্ষতি না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক,” বলেছেন তিনি।

সুন্দরবন এলাকার কৌশলগত পরিবেশ মূল্যায়নের (এসইএ) আগে সেখানে যাতে বড় কোনো শিল্প বা অবকাঠামো নির্মাণ করা না হয়, তা বাংলাদেশ সরকারকে নিশ্চিত করতে বলেছে ইউনেসকো।

পোল্যান্ডের ক্রাকাও শহরে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১তম সভায় সুন্দরবন বিষয়ে শুনানিতে এই প্রস্তাব গৃহীত হয় বলে রোববার জাতিসংঘ সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।

সুন্দরবনের কাছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে ইউনেসকো তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল।

ওই সভার পর সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল, ইউনেসকো সুন্দরবনের কাছে রামপালে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে ‘আপত্তির জায়গা থেকে সরে এসেছে’।

তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রবিরোধী পরিবেশ ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সরকারের ওই বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে।

ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তটি প্রকাশের পর দেখা যায়, তার সঙ্গে সরকারের বক্তব্য পুরোপুরি মিলছে না।

এটি প্রকাশ হওয়ার পর সোমবার বিদ্যুৎ ভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন তৌফিক ইলাহী, যিনি ক্রাকাও বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, “রামপাল প্রকল্প চলমান থাকবে। সেই সঙ্গে ইউনেসকোর পরামর্শ অনুযায়ী স্ট্রাটেজিক্যাল এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেসমেন্টও চলবে।”

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ; রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে ইউনেসকোর ওই তালিকা থেকে সুন্দরবনের বাদ পড়ার ঝুঁকিও দেখা দেয়।

সরকার আয়োজিত এক মেলায় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মডেল (ফাইল ছবি)

তৌফিক ইলাহী বলেন, “ইউনেসকোর খসড়া প্রতিবেদনে ‘ইনক্লুডিং রামপাল’ শব্দ ছিল। (শুনানিতে) যুক্তিতর্কের পরে ওই শব্দটা তুলে নিয়েছে।

“তারা বলেছিল, পরিবেশ সমীক্ষা না করে বড় প্রকল্প না করতে। আমরা সেখানে রামপাল ছাড়া আরও কয়েকটি প্রকল্প স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছি। তারা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।

“খসড়া প্রতিবেদনে রামপাল বন্ধ থাকার কথা ছিল। এখন তারা বলছে, না এটা চলবে। এতে যদি কোনো প্রতিকার নেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেটা নিতে হবে।”

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রবিরোধী আন্দোলনকারীদের সংগঠন তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সরকারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছিলেন।  

ইউনেসকোর সিদ্ধান্ত প্রকাশের পর তিনি সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, অসততা ও একগুয়েমি করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে চাইছে সরকার।”

তৌফিক ইলাহী বলেন, “এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই। সবাই দেশকে ভালোবাসে। ভুল ব্যাখ্যা বা সঠিক ব্যাখ্যা বলতে কিছু নেই। কোনো সমস্যা থাকলে সমাধানের উপায় নিয়ে আসতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব।”

ক্রাকাও বৈঠকে ইউনেসকোর আগের অবস্থান থেকে কোন কোন জায়গায় সরে এসেছে, তা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন তিনি।  

“মৌলিক পরিবর্তন হল, নতুন স্ট্রাকচার না করার ক্ষেত্রে আগে তাদের কথা ছিল ‘ইনক্লুডিং রামপাল’ বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই কথাটা তারা বাদ দিল। উই রিগ্রেটস স্টেট পার্টি…. এই বাক্য থেকে রিগ্রেটস শব্দটা বাদ দেওয়া হয়েছে।”

“দ্বিতীয়ত আগে বলেছে, তোমরা রামপাল প্রকল্প বন্ধ রাখবা, দেশে শুনে তারপর হবে। এখন বলছে না এটা চলবে। পাশাপাশি যদি আমরা দেখি যে এনভাইরনমেন্টাল এসেসমেন্টের ফলে আরও মিটিগেটিং মেজার নেওয়া প্রয়োজন যেটা আমরা আগে হিসাবের মধ্যে ধরিনি, সেটা করতে হবে।

“তৃতীয়ত সুন্দরবন ডেনজার সিচুয়েশনে.. যেটা বলেছিল সেটা এখন আর বলছে না।”

রামপালবিরোধী বিক্ষোভ (ফাইল ছবি)

সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ সচিব আহমেদ কায়কাউস বলেন, “রামপালের দ্বিতীয় পাওয়ার প্লান্ট এবং ওরিয়ন পাওয়ার প্লান্ট স্থগিত করতে সরকারের পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই।

“ধরে নেওয়া হচ্ছে, রামপাল যেটা হচ্ছে সেটা নিয়ে আপত্তি নেই। তাই অন্য যে দুটো বন্ধ হয়েছে, সেটাকে স্বাগত জানানো হয়েছে।”

রামপালবিরোধীদের মধ্য থেকে পুনরায় সমীক্ষার যে দাবি তোলা হয়েচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে তৌফিক ইলাহী বলেন, “আমি বলতেছি না কারও হারজিত হইছে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে যে একটা আবহ তৈরি করা হয়েছিল যে সুন্দরবন হুমকির সম্মুখিন সেটা এখন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।”

সরকারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগের প্রেক্ষাপটে তৌফিক ইলাহী বলেন, “সত্য-মিথা এগুলোতে আমি নেই। আমি আশা করব, আমাদের মিডিয়া যারা আমার সামনে বসা আপনারা সত্য চান। আমাদের বিবেচনায় বহু কিছু রয়েছে। এভাবে একটাকে নিয়ে পড়ে না থেকে সামনে অগ্রসর হই। তাহলে বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে।”