ঢাবির সঙ্গে সেন্ট্রাল হাসপাতালের সমঝোতা, বিএমএ’র নতুন কর্মসূচি

চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ নিরসনে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতায় এলেও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2017, 07:13 PM
Updated : 28 May 2017, 07:21 PM

সমঝোতার পর সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য আদালতে আবেদন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তবে বিএমএ মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ আমরা ‘সারা দেশে চিকিৎসকদের উপর হামলা’র শেষ দেখতে চাই।

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা চিকিৎসকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ চাই।”

এদিন বিএমএ’র এক বৈঠকে কর্মস্থলে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা চেয়ে আগামী ৪ জুন আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

বিএমএ’র নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২৯ মে থেকে ঈদুল ফিতরের ছুটি পর্যন্ত কর্মস্থলে কালোব্যাজ ধারণ, সোমবার স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক এবং মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন।

এছাড়া আগামী ১৮ জুন সকাল ৬টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ রাখবেন চিকিৎসকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আফিয়া জাইন চৈতী গত ১৮ মে বিকালে সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর ভুল চিকিৎসার অভিযোগে গ্রিন রোডের বেসরকারি হাসপাতালটিতে ভাংচুর চালায় তার সহপাঠীরা।

তাদের অভিযোগ, বুধবার ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তি হলেও তাকে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এরপর ওইদিন রাতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘অবহেলা’ ও ‘ভুল চিকিৎসার’ অভিযোগে হাসপাতালটির পরিচালকসহ নয়জনকে আসামি করে একটি মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মামলায় হাসপাতালের পরিচালক এম এ কাশেমকে গ্রেপ্তারের পরদিন জামিন পান তিনি।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সাত দিনের কর্মসূচি পালনের পর রোববার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করল বিএমএ।

চিকিৎসকদের সংগঠনটি বলছে, চৈতী এক ধরনের ব্ল্যাড ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তিনি রোগটির এমন পর্যায়ে ভর্তি হয়েছিলেন যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা শুরুও করতে পারেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালের পরিচালক এম এ কাশেম রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা আমাদের হাসপাতাল ভাংচুর করলেও, তাদের আমরা ক্ষমা করে দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা আর সামনে না এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চৈতীর বাবার নামে ২০ লাখ টাকার একটি চেক ছাড় করেছে বলে জানান তিনি।

ডা. কাশেম বলেন, “আমরা ভুল (চৈতীর চিকিৎসায়) কিছুই করিনি। পরিবারটিকে সহায়তা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের অনুরোধ করেছিল। আমরা তা করতে রাজি হয়েছি।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সমঝোতা হওয়ায় তারাও আর বিষয়টা সামনে বাড়াতে চান না।

“হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি আর না চালানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে আমরা গত ২৫ মে আদালতে একটি আবেদন জমা দিয়েছি।”

তবে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চৈতীর পরিবারকে মোট কত টাকা দেবে তা জানাননি আমজাদ আলী।

“তাদের (হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ) সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছি।”

এদিকে বিএমএ মহাসচিব বলছেন, সারা দেশে চিকিৎসকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কারো সঙ্গেই আমাদের করার কিছুই নেই। আমাদের চিকিৎসকরা প্রতিদিনই হামলার শিকার হচ্ছেন। আপনি কি এমন কোনো পেশার নাম বলতে পারেন যারা এ ধরনের হামলার শিকার হচ্ছে? কিন্তু আমরা শিকার হচ্ছি।”

ইহতেশামুল বলেন, “কেন আপনি আমাকে আক্রমণ করবেন? আমি ভুল কিছু করে থাকলে তার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশের আইন রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকরা প্রতিনিয়ত হামলার শিকার হচ্ছেন বলে আমরা লক্ষ করছি। আমরা এর শেষ চাই।”

বিষয়টি নিয়ে আগামী ৭ জুন তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলেও জানান বিএমএ মহাসচিব।

এছাড়া সারা দেশে বিএমএ’র শাখাগুলোর সভাপতি ও মহাসচিবদের নিয়ে আগামী ৩ জুলাই একটি বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়েছে।