কবরীর ‘স্মৃতিটুকু থাক’ ভাষা শহীদদের নিবেদন  

ভাষা শহীদদের প্রতি নিজের আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘স্মৃতিটুকু থাক’ নিবেদন করেছেন কবরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2017, 02:45 PM
Updated : 28 Feb 2017, 02:46 PM

কয়েক দশকজুড়ে দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা বাংলা চলচ্চিত্রের এই অভিনেত্রীর প্রথম আত্মজৈবনিক গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং লিমিটেড (বিপিএল)।

মাসব্যাপী মেলার শেষ দিন মঙ্গলবার মেলায় এসে তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতেই ‘বেশ তাড়াহুড়ো’ করে বইটি লিখেছেন তিনি।

“তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অনেক স্যাক্রিফাইস করেছি, অনেক বিষয় বাদ পড়ে গেছে। তবে আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভাষার মাসে, একুশে মেলায় বইটি দেওয়া। বই প্রকাশের মাধ্যমে একুশের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই বইটি নিয়ে এসেছি। দুই কলম লেখনীতে আমার প্রাণের আকুতি পৌঁছাতে পারলে সেখানেই আমার সফলতা।”

কবরী বলেন, “সাদা চোখে অনেক বলবে রফিক, শফিক, জব্বারদের কথা তো বইয়ে লেখা নাই।কিন্তু আমার লেখনীতেই আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। তারা আছেন আমাদের অন্তরে, আছেন ধমনীতে।আমাদের মনেপ্রাণে তারা চিরজীবিত।”

তিনি বলেন, অনেক আগে থেকেই পরিবার আর ভক্ত-অনুরাগীদের অনুরোধ ছিল আত্মজীবনী প্রকাশের। কিন্তু মন সায় দেয়নি। একটি জাতীয় দৈনিকে কলাম প্রকাশিত হলেও তাতে ‘মন ভরেনি’।

“আমার নিজের অনুভূতি, ইমোশন, রাগ, দুঃখ আর কষ্টগুলো আমি নিজে যত আউটবার্স্ট করতে পারব, অন্যরা তো আমার মেজাজ বুঝবে না। আমি কিন্তু খুবই মুডি। সময়-কাল-পাত্র ভেদে আমি কখনও খুব সাধারণ, একেক সময় অসাধারণ হয়ে যাই।”

কবরী বলেন, “নিজের সাথে নিজেই যুদ্ধ করি, নিজের সাথে নিজেই কম্পিটিশন করি। নিজের কাঠগড়ায় নিজেকে দাঁড় করাই। এমনটা তো আমি না করলেও পারতাম। আবার ভাবি, আমার এমনটি করা উচিত।”

আত্মজীবনী প্রকাশে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

“তৌফিক ভাই-ই একদিন আমাকে বললেন, আপনি লিখতে শুরু করুন। তার মাধ্যমেই বিপিএলের সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি বলেন, ‘আপনি টানা লিখবেন না, একটু ব্রেক নেবেন। তার মধ্যে কপটতা নেই একদম। এক ধরনের সততা দেখেছি তার মধ্যে।”

আলাপচারিতার ফাঁকে ভক্ত-অনুরাগীদের সঙ্গে কথা চালিয়ে যান কবরী। তাদের অনুরোধে ছবিও তোলেন। প্রিয় নায়িকাকে কাছে পেয়ে অনেকের উচ্ছ্বাস ছিল বাধভাঙা।

কবরী বলেন, “দর্শকের কাছাকাছি বরাবরই ছিলাম। এবার নতুন আনন্দ আর এক নতুন পালক যোগ হল।কতটুকু সফল আর কতটুকু বিফল হলাম, তা আমার মাথায় আসছে না। কেবলই মনে হচ্ছে আরেকটু ভালো হতে পারত। আরেকটু সময় যদি পেতাম…

“যারা শিল্প সৃষ্টি করে, যাদের মনের ভেতরে কাজের তাগিদ থাকে, নিজের জীবনের সব টুকরো টুকরো স্মৃতিগুলোকে জড়ো করে পর মনে হল-আহারে সেটা কেন লিখলাম না? আফসোস কিন্তু থেকে যায়।”

দর্শকরা তার সিনেমার কথা মনে রাখলে এই বইয়ের মধ্যে তাকে নতুন করে খুঁজে পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন কবরী।

বিপিএলের স্টলে কবরীর এই আড্ডায় ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীও। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন আর্টস ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান।

কবি নুরুল হুদা তার স্বভাবসুলভ রসিকতায় মাতিয়ে রাখেন আড্ডা।

বিপিএলের স্টল থেকে ‘স্মৃতিটুকু থাক’ বইটি নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির বাংলা ভাষা ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ রিফাত মুনমুন।

লেখিকার অটোগ্রাফ নিয়ে বলেন, “এ এক অভূতপূর্ব মুহূর্ত, আমাদের মতো সাধারণ দর্শকের সঙ্গে কত সহজে মিশে গেলেন!”

রিফাতের সঙ্গে ছিলেনে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হংকংয়ের নাগরিক অ্যাং চেন। তিনি বলেন, “কিংবদন্তি নায়িকার কথা আমি দেশে ফিরে গিয়ে বন্ধুদের বলব। আমি তার ‘সুতরাং’, ‘রংবাজ’ ছবিগুলো দেখেছি।”

বনানী বিদ্যানিকেতনের বাংলা সাহিত্যের শিক্ষক রমেন রায় বলেন, “সিনেমা হলে গিয়ে তার কত ছবি দেখেছি! আজ তার সাথে দুটো কথা বলার সুযোগ হল। আমি ভাবতেই পারছি না।”

নওগাঁ থেকে মেলায় আসা সাবেক স্কুলশিক্ষক, লেখক খসরু চৌধুরী আর গৃহিণী রাশেদা বেগম ছুটে আসেন বিপিএলের স্টলে।

‘স্মৃতিটুকু থাক’-এ  লেখিকার অটোগ্রাফ নিয়ে রাশেদা বেগম বলেন, “আমার আর কিছু চাই না। আমার মেয়ে নিশাত আমাকে যখন বলল, বিপিএলে গেলে কবরীকে পাওয়া যাবে তখন আর দেরি করিনি। তার অটোগ্রাফ পাব এ তো স্বপ্নেও ভাবিনি।”

‘স্মৃতিটুকু থাক’ সংগ্রহে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তমা ও স্বর্ণা, ঢাকাই সিনেমার কর্মী মনিরুজ্জামান।

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামে। তখনও অটোগ্রাফ শিকারির দল ঢুঁ মারেন বিপিএলের স্টলে।

‘বাবা-মার বিয়ে বার্ষিকীতে উপহার দেব’, কারও ক্ষেত্রে জন্মদিনের উপহার-এ ধরনের নানা অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে বইটি দেওয়ার কথা জানিয়ে সেভাবে বইয়ে কবরীর অটোগ্রাফ নেওয়া চলতে থাকে মেলার আলো নেভার পর্যন্ত।