আইএস ‘সমন্বয়কের’ বিচার আটকে আছে তদন্তে

জঙ্গি নেতা সাখাওয়াতুল কবিরসহ চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলার বিচার আটকে আছে অধিকতর তদন্তে; যার কী হাল তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কেউ।

প্রকাশ বিশ্বাসপ্রকাশ বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2016, 04:09 AM
Updated : 25 July 2016, 08:46 AM

গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর আলোচিত এ মামলার বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়,

অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কয়েকটি তারিখ পার হলেও প্রতিবেদনের কোনো হদিস নেই।

ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর মামলাটির অভিযোগ গঠন হয়েছিল।

ওই বছরের ১৮ মার্চ মামলার আগে গ্রেপ্তারের সময় সাখাওয়াতকে বাংলাদেশে আইএসের ‘সমন্বয়ক’ হিসেবে দেখিয়েছিল পুলিশ। আসামি অন্যরা হলেন- আনোয়ার হোসেন বাতেন, রবিউল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম।

তবে গত দেড় বছরে বাংলাদেশে বিভিন্ন জঙ্গি হামলায় আইএসের নামে দায় স্বীকারের বার্তা আসার পর তা নাকচ করে পুলিশ বলছে, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এই দলটির কোনো তৎপরতা বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে স্থানীয়ভাবে বেড়ে ওঠা জঙ্গিরা।

সাখাওয়াতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর পর চলতি বছর ৮ মার্চ অধিকতর তদন্তের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ মাহমুদুল কবীর আদালতে আবেদন করেন। যুক্তিতে তিনি বলেছিলেন, এই ঘটনার বিষয়ে আরও ‘মৌখিক ও দালিলিক’ সাক্ষ্য পাওয়া যাচ্ছে।

তার ওই আবেদনে বিচারক মো. রুহুল আমিন গত ২০ মার্চ বিচার স্থগিত করে মামলার নথিপত্র মহানগর দায়রা জজ আদালতের সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেন।

কিন্তু চার মাসের বেশি সময় পার হলেও অধিকতর তদন্তের অগ্রগতি নেই। মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, কয়েকবার পেছানোর পর আগামী ১৮ অগাস্ট মামলাটির অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ  রয়েছে।

এ মামলার তদন্তের দেখভালকারী কর্মকর্তা মাহমুদুল কবিরের কাছে অগ্রগতির খবর জানতে চাইলে তিনি প্রথমে মামলার কথা মনেই করতে পারছিলেন না।

কিছু বর্ণনা দেওয়ার পর তিনি বলেন, “আমি এ মামলার তদন্ত দেখভাল করতাম মাত্র।”

অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব কোন কর্মকর্তার হাতে, তা তিনি বলতে পারেননি।

“এ মামলার তদন্ত করত গোয়েন্দা কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের (গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় নিহত) টিম। এখন এটি কী অবস্থায়, ঠিক বলতে পারছি না।”

যে কর্মকর্তা তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন, সেই ডিবি পরিদর্শক এ কে এম কামরুল আহসান এখন মাদারীপুরে কর্মরত।

তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর আর কোনো খবর রাখিনি। অধিকতর তদন্ত কতদূর, কী অবস্থায়, তা তো আমার বলার সুযোগ নেই।”
বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমানকে রোববার বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যিনি অতিরিক্ত তদন্তের আবেদন করেছেন তারই তো দায়িত্ব তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানা। অথচ তিনিই জানেন না। এটা কি রকম কথা!”

আসামিদের পক্ষে আদালতে দাঁড়ানো আইনজীবী ফরিদ উদ্দিন তালুকদার বলেন, “আমি প্রথমদিকে আসামিদের জামিন চেয়েছিলাম, কিন্তু পরে আর আমাকে তাদের দরকার নেই জানালে আমি মামলাটি ছেড়ে দিই।”

মামলাটির বাদী গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক নজরুল ইসলামের কাছে খবর জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুনরায় তদন্ত সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।

গত বছরের ১৮ জানুয়ারি তিনজনের নাম উল্লেখ করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলাটি করেছিলেন নজরুল।

এজাহারে বলা হয়, খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য সাখাওয়াত আইএসের আঞ্চলিক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আসামিরা জেএমবি ও আইএসের মতাদর্শে উজ্জীবিত হয়ে পরস্পর যোগসাজশে গোপনে কর্মী সংগ্রহ করছে।

“সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও টার্গেট করে তারা হত্যা পরিকল্পনা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করে।”

গত দেড় বছরে আইএসের নামে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটছে, যাকে ‘টার্গেট কিলিং’ বলছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পুলিশ কর্মকর্তারা।

এরপর গত ১ জুলাই রাজধানীর কূটনীতিকপাড়া গুলশানের ক্যাফেতে ঢুকে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এত বড় জঙ্গি হামলা বাংলাদেশে আগে কখনও হয়নি।  

সাখাওয়াতদের বিরুদ্ধে মামলার পাঁচ মাস পর ১৫ মে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় আদালতে। আসামিদের যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার উত্তর রায়েরবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সাখাওয়াতের বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, তার বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের কলেজ রোডে। তার বতর্মান ঠিকানার জায়গায় অভিযোগপত্রে গাজীপুরের জয়দেবপুরের হ্যারিকন রোড লেখা হয়েছে।

রবিউলের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুরের পাতিবিলায়। তার বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে গাজীপুরের জয়দেবপুরের ছয়দানা হাজীরপুকুরে। নজরুলের বাড়িও একই স্থানে।

আনোয়ারের বাড়ি সিরাজগঞ্জের চৌহালির খাস কাউলিয়ায়। যাত্রাবাড়ীর উত্তর রায়েরবাগের বাগানবাড়ি সড়কের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি।