বীর প্রতীক আখতার আহমেদ আর নেই

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অকুতোভয় সৈনিক, সেনাবাহিনীর চিকিৎসক আখতার আহমেদ বীর প্রতীক আর নেই।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2016, 07:18 AM
Updated : 23 March 2016, 02:22 AM

সোমবার গভীর রাতে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়।  তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

একাত্তরের মে মাসে আগরতলার মতিনগরে ‘বাংলাদেশ হাসপাতাল’ নামে যে অস্থায়ী হাসপাতাল চালু হয়েছিল, তার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তখনকার সেনাবাহিনীর ডা. আখতার আহমেদ।  

মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি সে সময় তিনি সম্মুখ সমরেও অংশ নেন। ডাক্তার হয়েও ক্যাপ্টেন আখতার যুদ্ধক্ষেত্র একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন বলে ২ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক খালেদ মোশাররফ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন।

আখতার আহমেদের ছেলে তানিম আহমেদ জানান, তার বাবা হৃদরোগের পাশাপাশি ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। বুকে ব্যথা অনুভব করায় রাত দেড়টার দিকে ওল্ড ডিওএইচএস এর বাসা থেকে তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয়। সেখানেই রাত সোয়া ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।  

তানিম জানান, মঙ্গলবার আসরের পর ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে মুক্তিযোদ্ধা আখতার আহমেদের জানাজা হয়। পরে তাকে দাফন করা হয় বনানীর সামরিক কবরস্থানে।

১৯৭০ সালে ডাক্তারি পাস করে ঢাকা মেডিকেলের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে আখতার আহমেদের কর্মজীবন শুরু। পরে যোগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে।

সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পদে তার প্রথম কর্মস্থল ছিল কুমিল্লা সেনানিবাস। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে আগে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সেনানিবাসের বাইরে পাঠানো হয়। একটি ইউনিটের সঙ্গে আখতার আহমেদকে  পাঠানো হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

২৭ মার্চ মেজর শাফায়াত জামিলের (পরে সেনাবাহিনীর কর্নেল হয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য পান বীর বিক্রম খেতাব) নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন একদল সেনা কর্মকর্তা। ওই বিদ্রোহে আখতার আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

খালেদ মোশাররফ পরে ক্যাপ্টেন আখতারকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ডেকে পাঠান এবং ঢাকা থেকে আগরতলায় আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে একটি হাসপাতাল গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। 

এরপর ক্যাপ্টেন আখতারের নেতৃত্বে আগরতলার মতিনগরে কয়েকটি তাঁবুতে চালু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রথম বাংলাদেশ হাসপাতাল। অবশ্য পরে নিরাপত্তার জন্য হাসপাতালটি সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য আখতার আহমেদকে ১৯৭৩ সালে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত  করে বাংলাদেশ সরকার।

আখতার আহমেদের পৈত্রিক বাড়ি পুরান ঢাকার অভয় দাস লেনে। তার ছোট ভাই মঞ্জুর আহমেদও বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা।

বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, সেই দিনগুলোতে সেনানিবাসে বাঙালি কর্মকর্তা ও সৈনিকদের মানসিক সঙ্কট আর বিদ্রোহের পটভূমির কথা আখতার আহমেদ লিখে গেছেন তার ‘বারবার ফিরে যাই’ বইয়ে।

১৯৭৬ সালে সেনাবাহিনীর মেজর পদ থেকে স্বেচ্ছা অবসরে যান এই মুক্তিযোদ্ধা। পরে চিকিৎসক হিসেবে তার বেশ কয়েক বছর কাটে লিবিয়ায়।   

দেশে ফিরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে যোগ দিলেও পরে চাকরি ছেড়ে মন দেন ব্যবসায়। ‘গাড়িতে ইউরোপ ভ্রমণ’ নামে একটি ভ্রমণ কাহিনীও লিখেছেন তিনি।