নিজ কর্মস্থলে ডা. রশিদকে সহকর্মীদের শেষ শ্রদ্ধা

দেশের প্রথম নিউরোসার্জন অধ্যাপক রশিদ উদ্দিন আহমদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থলের সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2016, 07:46 AM
Updated : 20 March 2016, 09:28 AM

রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মসজিদে প্রয়াত এই ইমেরিটাস অধ্যাপকের জানাযার পর তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা করা হয়।

দশ দিন অচেতন অবস্থায় থেকে শনিবার মারা যান ৭৯ বছর বয়সী রশিদ উদ্দিন। সত্তরে তিনিই ছিলেন দেশের একমাত্র নিউরোসার্জন। তার হাত ধরেই তৎকালীন পিজি হাসপাতালে নিউরোসার্জন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।

সকাল ১০টার দিকে রশিদ উদ্দিনের মরদেহ বিএসএমএমইউতে আনা হলে সেখানে শোকাহত সহকর্মীরা তাকে একনজর দেখেন। এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রথম জানাযা।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খান, জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান, বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বিএসএমএমইউর তিন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক রুহুল আমিন মিয়া ও অধ্যাপক শহীদুল্লাহ সিকদার ও অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলী আসগর মোড়ল, ডেন্টাল অনুষদের ডীন অধ্যাপক শামসুল আলম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এবিএম আব্দুল হান্নান ও প্রক্টর অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলালসহ শিক্ষক, চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নার্সরা জানাযায় অংশ নেন।

অধ্যাপক রশিদ উদ্দিন আহমদ

পরে ডা. রশিদের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়, যাতে বিশিষ্টজন এবং বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি অংশ নেন।

এসময় উপস্থিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সার্জারি অনুষদের ডীন ও নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান কনক কান্তি বড়ুয়া, এনেসথেশিয়া এনালজেশিয়া অ্যান্ড ইনটেসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক।

জানাযার আগে অধ্যাপক রশিদের শ্রদ্ধা জানিয়ে উপাচার্য কামরুল হাসান বলেন, “বাংলাদেশের নিউরোসার্জারি প্রতিষ্ঠায় তার অবদানই সবচেয়ে বেশি। আমাদের এ বিশ্ববিদ্যালয়েও নিউরো সার্জারি বিভাগ চালু করেছেন তিনি।

“১৯৭৪ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল তার। এখানে ইমেরিটাস অধ্যাপক থাকাবস্থায় তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।”

এর পর প্রয়াত এই চিকিৎসকের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নরসিংদীতে। সেখানে শহীদ গিয়াসউদ্দিন আহমদ বালিকা বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আগের দিন কনক কান্তি বড়ুয়া অধ্যাপক রশিদের ভূমিকা স্মরণ করে বলেন, ১৯৭০ সালে নিউরো সার্জারির রোগী দেখা শুরু করেন তিনি। সত্তরে তিনিই ছিলেন একমাত্র নিউরোসার্জন। সে সময় গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিতেন তিনি। পাকিস্তানি সেনারাও চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যেত।

“মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করার বিষয়টি পাকিস্তানি সেনারা জেনে যাওয়ার পর সেপ্টেম্বরে তাকে দেশ ছাড়ার আহ্বান জানান কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। তখন তিনি আগরতলা যান।”

স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে রশিদ উদ্দিন বিএসএমএমইউয়ে (তৎকালীন আইপিজিএমআর) নিউরোসার্জারি বিভাগ চালু করেন বলে জানান অধ্যাপক কনক।

“তার উৎসাহেই ঢাকা মেডিকেল কলেজেও নিউরোসার্জারি বিভাগ খোলা হয়। শুরুর দিকে সেখানে গিয়েও ক্লাস নিতেন তিনি।”