বন্দি বিনিময়ে গতি চায় ঢাকা-দিল্লি

বাংলাদেশ অনুপ চেটিয়াকে এবং ভারত নূর হোসেনকে ফেরত দেওয়ার পর দুই দেশই নিজ নিজ দেশের কারাবন্দি নাগরিকদের ‘যত দ্রুত সম্ভব’ দেশে ফিরিয়ে নিতে চাইছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2015, 10:17 AM
Updated : 17 Nov 2015, 12:16 PM

মঙ্গলবার ঢাকার একটি হোটেলে বাংলাদেশ ও ভারতের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে ‘আন্তরিক’ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান।

বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের দেশের কারাগারে কিছু ভারতীয় নাগরিক আছে। তাদের দেশের কারাগারেও আমাদের নাগরিক আছে। তাদের যাতে তাড়াতাড়ি নিজ দেশে ফিরিয়ে দিতে পারি এবং নিতে পারি সে ব্যাপারে আন্তরিকভাবে আলোচনা হয়েছে।”

বৈঠকে নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধ নিয়েও  আলোচনা হয়েছে বলে জানান সচিব।

ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার নেতা অনুপ চেটিয়াকে গত ১১ নভেম্বর হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। এর একদিন পর নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত ফেরত দেয়।

এদিকে কয়েক মাস নিখোঁজ থাকার পর গত ১১ মে ভারতের মেঘালয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের খোঁজ পাওয়া যায়। তিনি সেখানেই আটক রয়েছেন।  

বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, “সুনির্দিষ্ট কোনো নেতা বা ব্যক্তির নাম বলা হয়নি। যারা আছেন, তাদের আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।”

বেলা ৩টার দিকে দুই দেশের সচিবদের মধ্যে কার্য বিবরণীর ওপর স্বাক্ষর হয়।

এটি কোনো চুক্তি নয়- জানিয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা দুই দিন যে আলোচনা করেছি, তার ওপর একটি কার্য বিররণী হয়েছে। তার ওপর স্বাক্ষর করতে হয়।”

ভারতে আটকে থাকা বাংলাদেশি অপরাধীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সুনির্দিষ্ট বলতে কি, কোনো টাইম লিমিট নেই, যত দ্রুত সম্ভব তারা আমাদের সহযোগিতা করবে।”

কতজন বাংলাদেশি ভারতে আটক আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৬২ জনের মতো।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় নিয়ে দীর্ঘদিন কথা হচ্ছে এবং বিভিন্ন ঘটনার পরে এই বিষয় নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু কথাও বলা হয়েছে।

উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া ও সাত খুনের আসামি নূর হোসেন। এক দিনের ব্যবধানে তাদের হস্তান্তর করে বাংলাদেশ ও ভারত।

আজকে এই বিষয় নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না- জানতে চাইলে সচিব বলেন, “এই আলোচনা চলমান, সারা জীবনই চলবে। কারণ ঘটনা একটার পর একটা ঘটবে, আমরা নতুন করে তথ্য বিনিময় করব।

“আমরা মনে করি, এই অঙ্গীকার যেমন আজকে ঘোষিত হয়েছে, অতীতও ছিল। এই সব ঘোষণার পেক্ষিতে আমরা কিছু কাজ অতীতেও করেছি। কাজেই আমাদের এটি নতুন কিছু না।”

বৈঠকে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা, মাদক পাচার প্রতিরোধ এবং ভারতীয় জেলেদের অবৈধভাবে বাংলাদেশের জলসীমানায় প্রবেশ বন্ধের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সচিব বলেন, “ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোনো আস্তানা বাংলাদেশে নাই, তৎপরতা নাই- তা আমরা তাদের জানিয়েছি।

“তারপরও আমি বলব- এগুলো ‘ছদ্মপরিচয়ে’ থাকে। এ বিষয়ে আমরা সচেতন আছি। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা কোনো তথ্য পেলে আমাদের জানাবে।”

বৈঠকে বাংলাদেশের ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলে পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, কোস্টগার্ড মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এম মকবুল হোসেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুমিন, অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব কমল কান্তি বৈদ্য, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুল রহমান ছিলেন।

ভারতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব মেহর্ষি, বিএসএফ মহাপরিচালক ডি কে পাঠক এবং বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণসহ ১৫ জন।